আশুলিয়ায় ৬ শিক্ষার্থী হত্যার মামলা
গত ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় সংঘটিত একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে ৬ শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা নিয়ে করা মামলায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুল ইসলাম এবং আরও চারজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর), ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আশুলিয়ায় ৬ শিক্ষার্থী হত্যার মামলা এই আদেশ দেন। প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
গত ৫ আগস্টের ঘটনাটি সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেদিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়, আশুলিয়ার নির্দিষ্ট একটি এলাকায় ৬ জন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর, সেই শিক্ষার্থীদের মরদেহ একটি ভ্যানে তোলা হয় এবং পরিকল্পিতভাবে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পুলিশ সদস্যরা মরদেহগুলো ঢেকে রাখার জন্য রাস্তার ধারে থাকা পুরোনো ব্যানার এবং ময়লা চাদর ব্যবহার করেছিল। পরে মরদেহগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে একাধিক নিথর দেহ পড়ে আছে এবং পাশ থেকে আরও একটি মরদেহ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। এই ভিডিও দেখে নিহতদের পরিবার দুই জনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
মামলার অগ্রগতি
এই নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর ভিত্তিতে তদন্ত চলতে থাকে এবং তদন্তে তৎকালীন সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সাইফুল ইসলাম এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, মামলায় নাম গোপন রাখা চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানার শুনানি
আদালত আগামী ২৬ জানুয়ারি এই গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের অগ্রগতি নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেছেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে বিচারিক কার্যক্রম আরও সহজ হবে।
জনমনে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় দেশব্যাপী শোক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতা, নাগরিক সমাজ, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে।
এখন সবাই অপেক্ষা করছে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য, যেখানে নতুন তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন ইতোমধ্যে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই জঘন্য অপরাধের সঠিক বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
-সাইমুন ইসলাম