বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের নতুন বই সংকট: পিডিএফ এবং পুরাতন বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা

শিক্ষার্থীদের নতুন বই

শিক্ষার্থীদের নতুন বই সংকট: নতুন বছর শুরু হলেও ময়মনসিংহের অসংখ্য শিক্ষার্থী এখনও তাদের পাঠ্যবই হাতে পায়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে পিডিএফ ফাইল থেকে প্রিন্ট কপি তৈরি করছে অথবা পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংকট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ময়মনসিংহ জেলায় সাড়ে তিন হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৭১ হাজার ৭২৫ জন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই এখনও সরবরাহ করা হয়নি। পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য ৮৯ লাখ বইয়ের চাহিদা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ লাখ বই বিতরণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নতুন বই সংকটময় অবস্থা

বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছাড়া অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই পায়নি। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুন নাহার জানান, পাঠ্যবই সংকট থাকায় পুরাতন বই ও পিডিএফ ফাইলের সাহায্যে পড়াশোনা চালানো হচ্ছে। একই অবস্থা সিটি কলেজিয়েট স্কুল, হলি ফ্যামিলি স্কুল এবং ময়মনসিংহ জুট মিলস আদর্শ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা:


চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তকিম বিল্লাহ জানায়, এখনো কোনো নতুন বই পায়নি। তার মা পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়াশোনা করাচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রফিকুল হকও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পরিচিতজনদের কাছ থেকে পুরোনো বই সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশের বাবা পিডিএফ ফাইল থেকে প্রিন্ট কপি বানিয়ে স্পাইরাল করে বাধিয়ে দিয়েছেন। আকাশ জানায়, এর ফলে সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছে। তবে যেসব পরিবারের আর্থিক সংকট রয়েছে, তারা এমন বিকল্প ব্যবস্থাও নিতে পারছে না।

কম্পিউটারের দোকানে ভিড়

শহরের দূর্গাবাড়ি এলাকার কম্পিউটারের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, অভিভাবকরা নতুন বইয়ের পিডিএফ থেকে প্রিন্ট কপি তৈরি করছেন। কেউ কেউ আবার টাকা বাঁচাতে প্রিন্ট করা পৃষ্ঠাগুলো ফটোকপি করে নিচ্ছেন। দোকানের এক কর্মচারী রিয়াদ জানান, প্রতিটি পৃষ্ঠার জন্য তিন টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যেসব বই পায়নি, সেগুলোই বেশি প্রিন্ট করাচ্ছে।

শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন জানিয়েছেন, বই সরবরাহে দেরি হওয়ার কারণ হলো বই পরিমার্জন ও ছাপার কাজে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে আশা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছে যাবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান জানান, বই সংকট থাকা সত্ত্বেও পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি আশাবাদী যে, অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে।

সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

বই না পাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নতুন বই হাতে পেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ে এবং তারা আনন্দের সঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। তাই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা জরুরি।

ময়মনসিংহের বই সংকট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। পিডিএফ ফাইল এবং পুরোনো বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় ও শিক্ষার মানে। দ্রুত বই সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

guest
0 মতামত সমুহ
Inline Feedbacks
View all comments