বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ এর অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪: প্রকৃত চিত্র কী বলছে?

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরেছে, যা সরকারের দাবি করা প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অর্থনীতির আকার ও বাস্তবতা

গত ১১ বছরে দেশে অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ৫১.৯১% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে মোট অর্থনৈতিক ইউনিট ছিল ৭৮.১৮ লাখ, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১.১৮ কোটি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠান বেড়েছে মাত্র ১৫.৩৯%। এর ফলে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি।

জিডিপি ও শিল্প খাতের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা

সরকারের দাবি অনুযায়ী, গত ১১ বছরে উৎপাদন খাতের মোট উৎপাদনমূল্য প্রায় ৫.৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক শুমারির ফলাফল বলছে, এই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাস্তব শিল্প ইউনিট বৃদ্ধির তেমন কোনো মিল নেই। শিল্প খাতে অর্থনৈতিক ইউনিটের অবদান কমে এসেছে ৮.৭৭%-এ, যা আগের শুমারিতে ১২.১৪% ছিল।

বাংলাদেশ কর্মসংস্থান পরিস্থিতি

গত এক দশকে দেশে মাত্র ৬২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যেখানে আগের ১০ বছরে তা ছিল ১.৩৩ কোটি। অর্থনীতিবিদদের মতে, জিডিপির আকার বাড়লেও উৎপাদন খাতের যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।

সেবা খাতের অগ্রগতি

সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ৫৬.৬৮% বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১.০৮ কোটি। ফলে অর্থনৈতিক ইউনিটের মোট অবদানে সেবা খাতের অংশ বেড়ে ৯১.২৩%-এ পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি শিল্প খাতের তুলনায় ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

নীতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের শিল্প খাতের টেকসই বিকাশের জন্য নীতি কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। সরকার যদি সত্যিকারের উৎপাদনশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে চায়, তবে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথাযথ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বড় করা হলেও শিল্প খাতের প্রকৃত উন্নয়ন ততটা দৃশ্যমান নয়। নীতিগত সংস্কার ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

guest
0 মতামত সমুহ
Inline Feedbacks
View all comments