ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে মারধরের চেষ্টা হয়েছে। এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সোমবার বেলা দুইটার পর কড়া পুলিশি পাহারায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। এ সময় আদালত চত্বরে সাবের হোসেন চৌধুরীর শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন একদল লোক। বেলা তিনটার পর যখন সাবের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশি পাহারায় হাজতখানা থেকে এজলাসকক্ষে নেওয়া হচ্ছিল, তখন বহিরাগত কয়েকজন তাঁকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন।
এজলাসকক্ষে দেখা যায়, সাবের হোসেন চৌধুরীর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট আর শরীরে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
দুই বছর আগে নয়াপল্টন এলাকায় সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যার মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তাকারী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর সাবের হোসেন চৌধুরীকে এজলাসকক্ষ থেকে বের করে আদালতের প্রবেশপথের প্রধান ফটকে আনা হয়। তখন একদল বহিরাগত সাবের হোসেন চৌধুরীকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুলিশ যখন তড়িঘড়ি করে সাবের হোসেন চৌধুরীকে হাজতখানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন এক যুবক তাঁকে মারধরের চেষ্টা করেন। পুলিশ দ্রুত তাঁকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই যুবক আবারও সাবের হোসেন চৌধুরীকে মারধরের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এর মধ্যেই দ্রুতগতিতে সাবের হোসেন চৌধুরীকে হাজতখানার ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে গত আগস্টে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়।
ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে পল্টন থানায় করা বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও মকবুল নামের বিএনপির এক কর্মীকে হত্যার অভিযোগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯০টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের সাবেক আইজিপি, ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ৪৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।