তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তিনি অংশীজনদের সঙ্গে বসে, তাদের পরামর্শ নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ঘোষণা করতে চান।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ‘মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্ক’ এবং ‘আইন ও বিচার’ নামে দুটি প্ল্যাটফর্ম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
তথ্য উপদেষ্টা এর আগে একাধিক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। আজকের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সেটির সর্বশেষ অবস্থা কী? সেই প্রেক্ষাপটে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এটি নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বসছেন। সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসা হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বসা এখনো শেষ হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে বসে, তাদের পরামর্শ নিয়ে তাঁরা এই সংস্কার কমিশন ঘোষণা করতে চাইছেন।
আলোচনায় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতায় পেশাদারত্বের চর্চার সংস্কৃতি দেশে অনুপস্থিত। মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই আলোচনা সবার জন্যই সহায়ক হবে।
সাংবাদিকেরা যাতে মুক্ত পরিবেশে গর্বের সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে পারেন, সে জন্য মাঠের সাংবাদিকদের ‘অ্যাকটিভিজম’ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, প্রথাগত ‘অ্যাকটিভিজমের’ জায়গাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকদের সামনে রেখে বারিধারা, পূর্বাঞ্চল, উত্তরায় প্লট নিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের স্বার্থের জন্য ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা’ নিয়েছেন। ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা’ নিয়ে তাঁরাই আবার সাংবাদিকদের শোষণ করেছেন। তাঁরা নিজের স্বার্থ দেখেছেন। তাই যেসব সাংবাদিক পথেঘাটে খাটেন, তাঁদের ‘অ্যাকটিভিজম’ করতে হবে।
সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ পরামর্শ দেন, সাংবাদিকতা নিয়ে যে কমিশন হচ্ছে, সেটি যেন ‘প্রেস কমিশন’ হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘সংবাদমাধ্যমের সংস্কার কেন, কীভাবে?’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আয়োজক প্ল্যাটফর্ম মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির। তিনি বলেন, ব্যক্তি ও সমাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যম–ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। লিখিত বক্তব্যে জিমি আমির বলেন, বিচারহীনতা ও জবাবদিহি না থাকায় এবং চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে মাঠের সাংবাদিকদের লেজুড়বৃত্তি সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে উঠছে। ‘পেশাদার’ সাংবাদিকদের লেজুড়বৃত্তির চর্চা এখন আর অপ্রকাশ্য নয়। প্রেসক্লাব, ডিআরইউ, ডিইউজে, বিএফইউজে বা আরও সাংবাদিক সংগঠন থাকার পরও বিভিন্ন বিটভিত্তিক, বিভাগভিত্তিক ও জেলাভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা পিকনিক, গিফটের নামে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি ও গ্রুপের কাছে চাঁদা দাবি করে থাকে। যাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কথা, উল্টো তারাই সাংবাদিকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
আইনজীবী সফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফসহ সাংবাদিকতার শিক্ষক ও সাংবাদিকেরা বক্তব্য দেন।