বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যা নিয়ে ভারত নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেনি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই গণহত্যার দায় যার ওপর বর্তায় উল্টো তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিবিসি হিন্দিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় নাহিদকে বাংলাদেশের সংখ্যলঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে নাহিদ বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। সংখ্যালঘুরা এদেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার বদলে বাংলাদেশের চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, ভারতের সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।
এসময় উপদেষ্টা নাহিদ বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। এতে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান নাহিদ। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ জুলাই–আগস্টে যে গণহত্যা ঘটিয়েছে, সেটাকে ভারত কীভাবে দেখে তা এখনও স্পষ্ট করেনি। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। অথচ যার ওপরে এই ঘটনার দায় বর্তায়, ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তৎপর। সে কারণেই সাম্প্রতিক দুর্গাপূজায় আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কোনো অঘটন ঘটেনি। আগের সরকারগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে সংখ্যালঘুদের অনুভূতিকে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এতে সরকারের প্রতি তাদের বিশ্বাস কমে গেছে। তবে বর্তমান সরকার এ বিশ্বাস পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর উত্থান হতে পারে, অনেকে এমন আশঙ্কা করছেন। তবে বাংলাদেশের জনগণ চরমপন্থাকে সমর্থন করে না এবং তারা গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আওয়ামী লীগ এমন একটি প্রচারণা তৈরির চেষ্টা করেছে যে, তাদের ছাড়া চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হবে। কিন্তু এই প্রচারণায় বিশ্বাস করেন না তিনি।
এই উপদেষ্টা বলেন, ভারত যদি আওয়ামী লীগ নয় বরং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়, তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।
ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন যৌথ প্রকল্প দুই দেশের জন্যই উপকারী হতে পারে বলে মন্তব্য করে নাহিদ বলেছেন, এই বিষয়গুলো কোনও নির্দিষ্ট দলের স্বার্থসিদ্ধির পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়।