<

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে লড়তে চান রুমিন ফারহানা, আপত্তি স্থানীয় বিএনপির একাংশের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। তবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না সরাইল উপজেলা বিএনপির তিনজনের আংশিক কমিটি।

এই আসনে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাধারণ কোনো নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা) বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসছেন। ১৯৭৩ সালের পর ছয়টিতে বিএনপি, তিনটিতে জাপা ও দুটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এখানে বিএনপির দলীয় কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হননি।  

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সরাইল উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিনজনের আংশিক কমিটি হয়েছিল ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল। কমিটিতে আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে সভাপতি, নুরুজ্জামান লস্করকে সাধারণ সম্পাদক ও ডি এম দুলালকে করা হয়েছিল সাংগঠনিক সম্পাদক। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আজও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু এতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামে শুধু সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্করের নাম প্রকাশ করা হয়। বাকি ৯৯ জনের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ও নুরুজ্জামান লস্করের কমিটিকে মেনে নিচ্ছেন না উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক কমিটির নেতা–কর্মীরা।
এখানে যুবদলের তিনজনের আংশিক কমিটির গঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর। এটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ ছাড়া এখানে ছাত্রদলেরও কোনো কমিটি নেই।

বিএনপির ঘাঁটিতে সাংগঠনিক এই অবস্থার মধ্যে রুমিন ফারহানা এখান থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টের পর সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তিনি সরাইল ও আশুগঞ্জে অবস্থান করছেন।

রুমিন ফারহানা বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত সরকারের আমলে গঠিত বিজয়নগর উপজেলাটি একসময় ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অধীন। তখন এলাকাটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-সদরের একাংশ) আসনের অন্তর্গত। বতর্মানে পুরো বিজয়নগর উপজেলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে রুমিন ফারহানার বাবা অলি আহাদ নৌকার প্রার্থী তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তখন তাহের উদ্দিন ঠাকুর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

উপজেলা বিএনপির আংশিক কমিটির সভাপতি প্রবীণ নেতা আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমিও প্রার্থী হতে চাই। এরপরও দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁর জন্যই কাজ করব। এটা বিএনপির উর্বর মাটি, ঘাঁটি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যিনি আসবেন, তাঁর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁকে বিজয়ী করবেন।’

সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর বলেন, ‘ উপজেলা বিএনপি পরিবার বহিরাগত কাউকে গ্রহণ করবে না। আমি নিজেও একজন প্রার্থী। আমরা চাই, এলাকার কাউকে প্রার্থী করা হোক। আমি শতভাগ নিশ্চিত, দল এখানে কোনো নারী প্রার্থী দেবে না।’ যদি দল রুমিন ফারহানাকে প্রার্থী করে, আপনি কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দলের বাইরে নই। দল যদি তাঁকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দিয়ে দেয়, তাহলে তাঁর নির্বাচন করব।’

সরাইল উপজেলা বিএনপির ১৮ বছরের কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী (রুমিন ফারহানা) আছেন। আমরা চাই, এখানে তাঁকে দলের প্রার্থী করা হোক। এলাকায় তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা। জনগণ তাঁর সঙ্গেই থাকবে। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করতে চান, তাঁদের কোনো সমর্থন নেই। তাঁরা টাকা দিয়ে তিনজনের কমিটি করেছে। তাঁদের কমিটির মেয়াদ চলে গেছে। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করতে পারছেন না। তাঁদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাজপুর গ্রামে কথা হয় রুমিন ফারহানার সঙ্গে। তিনি বলেন , ‘এ আসন থেকে আমার বাবা নির্বাচন করেছেন। নাড়ির টানে আমি এখান থেকে নির্বাচন করতে চাই। আমি দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। প্রচারণাও চলছে। দুই উপজেলার নেতা–কর্মী ও সাধারণ ভোটার আমার পক্ষেই আছেন।’