৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে গঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
দু’মাস পর আন্দোলন দানা বেঁধেছে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের দাবিতে। সরকার-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুতে কথা বলছেন নিজেদের কৌশলগত অবস্থান থেকে।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও পদত্যাগের ইস্যুতে স্পষ্ট আছে সংবিধানে। তবে সেটি সংসদ কার্যকর থাকলে। সংসদের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পথ খোলা নেই। আবার রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও সেটি জমা দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর। সংসদ না থাকায় এবং স্পিকারের পদত্যাগ করায় সাংবিধানিকভাবে সেই ধারাটিও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তাই সংবিধানের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের এখন আর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ। একই সঙ্গে, বিপ্লবী সরকার গঠনের সুযোগও সীমিত বলে মত দিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে, যে প্রক্রিয়াই হোক সবকিছুর বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে পরবর্তী সংসদে।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন, সংসদ যেহেতু নেই তাই সাংবিধানিক পদ্ধতি এখন আর কার্যকর নয়। এখন বর্তমান রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়টি নির্ভর করবে কেবলই ‘জন আকাঙ্খা’র ওপর।
ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, তার বিষয়ে জনআকাঙ্ক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। রাষ্ট্রপতিকে দিয়েই যে চলতে হবে এমনটির কোনো কারণ নেই। রাজনৈতিক ঐক্যমত্য থাকলে সংবিধানের বাইরে গিয়েও কাজ করা যেতে পারে। এ সময় তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, যদি কোনো কারণে বা দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মারা যান, তাহলে কী হবে? সংবিধান এইক্ষেত্রে কী সমাধান দেবে? এটি রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের বিষয়। সব দল স্বীকৃতি দিলে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
নানা পক্ষের আন্দোলনের মধ্যেও চেষ্টা চলছে সাংবিধানিক একটি উপায় বের করার। সেক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ১০৬-এর কথা বলছেন কেউ কেউ। যেখানে বলা আছে, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিমাংসায় আপিল বিভাগের মতামত চাইতে পারেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এই ধারায়, রাষ্ট্রপতি নিজের অপসারণ বা পদত্যাগ নিজেই কীভাবে চাইবেন সে প্রশ্নও তুলেছেন আইনজীবীরা।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদুল আলম খান বলেন, অনুচ্ছেদ ১০৬-এর আলোকে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ বা অপসারণ কীভাবে হবে সে বিষয়ে যে মত দেন সেটি সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। তাছাড়া সংবিধানের মধ্য থেকে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুযোগ নেই।
এই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের মতামত শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতিই নিতে পারেন। এর বাইরে কেউ সিদ্ধান্তের জন্য পরামর্শ চাইতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি যেহেতু নিজের অপসারণ চেয়ে মতামত নিবেন না, তাই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে কী করণীয় সেবিষয়ে আপিল বিভাগের মতামত নিতে পারেন।
আলোচনা আছে, বর্তমান অন্তর্বতী সরকারকে বিপ্লবী বা গণঅভ্যূত্থানের সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার। কিন্তু সরকার কার্যক্রম শুরুর দুই মাসের বেশি সময় পরে এর সুযোগ কম বলে মনে করেন ব্যারিস্টার সাইদুল আলম খান।
তিনি বলেন, সরকার যখন গঠন হয়েছে, তখনই কীভাবে পরিচালনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হতো। এ বিষয়ে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। কারণ এতদিন সবকিছু সংবিধানের মধ্য থেকেই হয়ে এসেছে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৬ ব্যবহার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে রাজনৈতিক ঐক্যমতই সহজ সমাধান হতে পারে বলে মত দিয়েছেন আইনজীবীও।