<

দেশের ডিজিটাল বাজারব্যবস্থা বুঝতে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত নেই

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে কোনো সমন্বয় নেই। ডিজিটাল বাজারব্যবস্থা বোঝার জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত বা গবেষণা নেই। ডেটা ও স্মার্টফোনের ব্যবহারও কম। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাত শক্তিশালী করতে হলে গবেষণার পাশাপাশি ডেটা ও স্মার্টফোন সহজলভ্য করতে হবে। খাতটি সার্বিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বিটিআরসির উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল সেবা বাড়াতে টেলিযোগাযোগ শক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনায় মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, স্টার্টআপ, ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতের বিষয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।

মুদি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালডাল লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলীম আলোচনার শুরুতে দেশের ডিজিটাল বাজারব্যবস্থার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ই-কমার্স ও মোবাইল ডেটার ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে মোবাইল অপারেটররা প্রাথমিকভাবে ১০ টাকায় মাসে ২ জিবি ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে দেখতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী ডিজিটাল বৈষম্য ও বিভাজন কমিয়ে এনে সেটাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াসহ যেসব ফারাক রয়েছে, তা দূর করতেই এ আলোচনা সভা। এ খাতেও সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য সক্রিয় নীতি প্রয়োজন।

একই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ হলেও আইসিটি ও টেলিযোগাযোগের মধ্যে গত ১০ বছরে কোনো সমন্বয় ছিল না বলেও জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান।

বিটিআরসি জানিয়েছে, ২০২৯ সালের মধ্যে টু-জি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডেটার ব্যবহার বাড়াতে স্মার্টফোন থেকে স্মার্টফোনের কলগুলোও ডেটার মাধ্যমে যেন হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর মোবাইল ডেটার দাম বেশি উল্লেখ করে বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ইন্টারনেট কেনার পেছনে ব্যয় করতে হয়। দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ব্রডব্যান্ডের মতো এখানেও এক দেশ এক রেট চালু করা যেতে পারে।

এইচটিটিপুল বাংলাদেশের পার্টনার ডিরেক্টর মুনাফ মজিব চৌধুরী বলেন, দেশে ডিজিটালি কী হচ্ছে, ইন্টারনেটের কী ব্যবহার হচ্ছে, তা কেউ জানে না। এসব নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা নেই। দেশের ডিজিটাল সেবার বাজার শক্তিশালী করতে এ ধরনের ডেটা বেশ প্রয়োজন। বিটিআরসি এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ফেসবুক। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায় না উল্লেখ করে শেয়ারট্রিপের প্রধান নির্বাহী ও সহপ্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া হক বলেন, একেক জায়গার তথ্য একেক রকম। ডিজিটাল সেবার জন্য সঠিক তথ্য প্রয়োজন।

ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহির চৌধুরী বলেন, বৈষম্য দূর করতে হলে ডেটা ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিনিয়োগকারীরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে ডেটা ও স্মার্টফোন ব্যবহারের আকার বেশি দেখে সেখানেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। তাই বাংলাদেশে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ কম। এ ছাড়া এখানকার নীতিও বিনিয়োগবান্ধব নয়।

টেলিযোগাযোগ এখন হাইওয়ে উল্লেখ করে এ খাতে সমন্বয় জরুরি বলে জানান বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান।

বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার মো. খলিল উর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে আরও আলোচনা করেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল হক, কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরী, দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো, গ্রামীণফোনের হেড অব ডিজিটাল চ্যানেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন জাহিদ জামান, ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) সাব্বির হোসেন প্রমুখ।