<

পাম অয়েলে চলছে নিম্নবিত্তের পরিবার

ঢাকা: ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। তবে দেশীয় বাজারে দাম চড়া। ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের দামে এখন বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। খুচরা বাজারে দুই মাসে প্রতি কেজি পাম অয়েলে দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ টাকা। ফলে রান্নার কাজে সয়াবিনের বদলে পাম অয়েল বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে নিম্নবিত্তের পরিবারে।

বাজারে হঠাৎ পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি বা গ্রাহক চাহিদাও বাড়েনি। চিনি ও ডিমের দাম কমলেও নাগরিকের সুফল ব্যাহত হচ্ছে অন্যসব নিত্যপণ্যে। এই মূল্যবৃদ্ধিকে তৃতীয় পক্ষের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা বলছেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে সয়াবিন তেলের বদলে রান্নায় পাম অয়েল ব্যবহার বেশি হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মূল্যবৃদ্ধিকে দুষছেন ভোক্তারা।

সয়াবিনের দামে প্রতি কেজি পাম অয়েল ১৮০-১৮৫ টাকায় কিনছেন গ্রাহক। যা গত ফেব্রুয়ারি মাসে সয়াবিনের লিটার ১৬৩ টাকা নির্ধারিত ছিল। অন্যদিকে সব ধরনের পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১৫ টাকা। তবে এলসি বন্ধের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিকে দুষছেন তারা। একইসঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণের দুর্বলতাকেও দুষছেন অন্য একটি পক্ষ।

সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবআির) শুল্ক ছাড়ের কারণে খুচরা বাজারে চিনির দাম কেজিতে কমেছে ৫ থেকে ৭ টাকা। তবে বেড়েছে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দাম। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তেলের প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে অন্তত ২৫ টাকা।

বাজার পর্যবেক্ষণে গতকাল শনিবার দেখা গেছে, পাম অয়েলের ১৮৪ কেজি (লিটার নয়) এক কন্টিনার হিসেবে ধরা হয়। জুলাইয়ের শেষে প্রতি কেজি ১৩৭ টাকা হিসাবে প্রতি কন্টিনারের দাম ছিল ২৫ হাজার ২০৮ টাকা। দুই মাস পরে অর্থাৎ গতকাল প্রতি কেজির দাম হয়েছে ১৬৫ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কন্টিনারের মূল্য ৩০ হাজার ৩৬০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২৮ টাকা।

মূলধনের সঙ্গে ব্যবসায়িক অন্যসব খরচ যুক্ত করে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। যা সয়াবিন তেলের প্রায় সমান দাম। ঘাটতি না থাকলেও আগের সয়াবিনের দামে এখন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা দোকানে সয়াবিন তেলের স্থান দখলে নিয়েছে এখন পাম অয়েল।

ঢাকার বাজারে ৫০ কেজি প্রতি বস্তায় অন্তত চারশ টাকা কমেছে চিনির দাম। ঢাকার কারওয়ান বাজারে গতকাল প্রতি বস্তা চিনি ৫ হাজার আটশ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে প্রতি কেজিতে চিনির দাম কমেছে ৫-৭ টাকা।

পেঁয়াজের দাম অনুসন্ধানে গতকাল কারওয়ান বাজারে গিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি ৪৭ কেজিতে এক বস্তা ধরা হয়। প্রতি কেজি ৯৩ টাকা হিসেবে ৪ হাজার ৩৭১ টাকায় এক বস্তা কিনেন ব্যবসয়ীরা। সেই দাম থেকে এক সপ্তাহে বেড়ে প্রতি কেজি এখন ১১০ টাকায় কিনতেন তারা। অন্য খরচ যুক্ত করে কেজিতে ১২৫-৩০ টাকায় বাজারে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে এলসি বন্ধের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলেন তারা।

অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ পাবনা এবং ফরিদপুরের মধ্যে দামে বেশ পার্থক্য রয়েছে। প্রতি ৭৮ কেজিতে এক বস্তা হিসাবে ধরা হয়। প্রতিকেজি পাবনার পেঁয়াজের মূল্য ১১৫ এবং ফরিদপুরের ১০৫ টাকা। সেই মূল্য ছাড়িয়ে প্রতি কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। গড়ে বাজারে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসবের সঙ্গে সামান্য বেড়েছে শুটমরিচের দাম। প্রতি কেজি কারেন্ট মরিচের দাম ৩৬০ টাকা থেকে এখন ৩৮০-৩৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

পাম অয়েল সম্পর্কে ঢাকার মগবাজারের আব্দুর রাজ্জাক স্টোরের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরবরাহ ঠিক আছে। গত দুই মাস হলো হঠাৎ বাড়তে থাকে পাম অয়েলের দাম। সয়াবিন তেলের চাহিদা আছে, দাম বেশি হওয়ায় অনেক চাহিদা কমেছে। এখন তারা কিনছেন পাম অয়েল।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশীয় বাজারে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের স্থলে পাম অয়েল বেশি ব্যবহার করছেন নিম্নবিত্তের পরিবারের সদস্যরা।

মূল্যবৃদ্ধির কারণসহ অন্যান্য তথ্য জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হককে গতকাল সন্ধ্যায় ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তার হোয়াটস অ্যাপে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগগুলো সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, অজস্র সীমাবদ্ধতা নিয়ে অসীম সমুদ্রের বাজারে টেকা যায় না। প্রথমত, আমাদের জনবল অনেক কম। কাজেই ইচ্ছা থাকলেও আমরা বাজারে সেই সাপোর্ট দিতে পারছি না, বলেন তিনি।

আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা নির্ধারিত ছিল। সে সময় চাল, চিনি ও খেজুরের ওপর এনবিআর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে ভোজ্যতেল আমদানির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। ফলে চার পণ্যের দাম কমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করলে চিনির দাম কমে এখন ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।