উৎপাদন এলাকা বগুড়া অঞ্চলে পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের সবজির দাম এখন চড়া। গত এক সপ্তাহে এখানকার মোকামে সবজির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। খুচরা পর্যায়েও অধিকাংশ সবজির কেজি এক শ টাকার আশপাশে। সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাঁচা মরিচ আর আলুর দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টির কারণে অনেক ফসল নষ্ট হওয়ায় পাইকারি মোকামে সবজির সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া শীতকালীন আগাম সবজিও সেভাবে আসছে না। এসব কারণে সবজির দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে তদারকি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া দুর্গাপূজার ছুটির পর হিমাগার পর্যায়েও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
বগুড়া জেলার অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম মহাস্থান হাট। এখান থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও এলাকায় সবজি সরবরাহ করা হয়। গত শুক্রবার এ হাটে পাইকারিতে এক কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা। এভাবে প্রতি কেজি বেগুন ও কাঁকরোলের দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায়, পটোল ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায়, শসা ৩০-৪০ টাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় উঠেছে। ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, কচুমুখি, মুলাসহ অন্যান্য সবজির দামও আগের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই পাইকারি হাটে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, অর্থাৎ ২৮০ টাকায় উঠেছে।
মহাস্থান হাটের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিতে অনেক খেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। এ কারণে হাটে সবজির সরবরাহ কম। অন্যান্য বছর এ সময় শীতকালীন আগাম সবজিতে হাট ভরে যেত। এবার মুলা ও লাউ ছাড়া শীতকালীন অন্যান্য সবজির তেমন সরবরাহ নেই। এসব কারণে সবজির দাম চড়া।
এদিকে মহাস্থান পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়া শহরের খুচরা বাজারেও বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। যেমন শহরের ফতেহ আলী বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪২০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ও করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৯০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, কচুমুখি ৭০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা এবং প্রতিটি লাউ গড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহে এ বাজারেও সবজির দাম দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
ফতেহ আলী বাজারে শুক্রবার কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলেন শহরের চেলেপাড়া এলাকার গৃহিণী অনিমা রায়। তিনি বলেন, পূজায় রান্নার আয়োজন বেড়েছে। অথচ এ সময় মরিচ ও সবজির দামে যেন আগুন লেগেছে।
আলুর দামও ঊর্ধ্বমুখী
হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বগুড়ায় হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি বিদেশি জাতের সাদা আলু গড়ে ২০ টাকা ও দেশি জাতের ছোট আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। গত শুক্রবার হিমাগার ফটকে (পাইকারি) প্রতি কেজি সাদা আলু ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা ও দেশি আলু ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে আলুর দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে প্রতি কেজি আলু ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার অন্তত ১০টি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বস্তা (৬০ কেজি) বিদেশি জাতের সাদা আলু বর্তমানে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় এবং দেশি ছোট আলু ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে সাদা আলু ২ হাজার ৫০০ এবং দেশি আলু ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ এক সপ্তাহে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি বস্তা আলুর দাম ২০০ টাকা বেড়েছে। একই অবস্থা পাশের জেলা জয়পুরহাটেও।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার পাল বলেন, সংরক্ষণ পর্যায়ে আলুর দাম, হিমাগার ভাড়া, চটের বস্তা ও পরিবহন খরচ যোগ করলে এক কেজি আলুর দাম সর্বোচ্চ ২৮ টাকা খরচ হওয়ার কথা। তবে শুক্রবার সেই আলু হিমাগারে বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি দরে।
সবজি ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় বাজার তদারকির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃষ্টিতে কৃষকের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবজির দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে কোনো যুক্তিতেই হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কথা নয়। দুর্গোৎসবের ছুটির শেষে আগামী সোমবার থেকে বাজারের পাশাপাশি হিমাগার পর্যায়েও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।