বছর দুয়েক আগে ভূমধ্যসাগরের ওপর গর্জন করেছিল ইসরাইলের কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান। সেই মহড়ারও ছিলো বিশেষ উদ্দেশ্য- সেটি হলো ইরানের পরমাণু কেন্দ্র। তখন এই ঘটনার জোর প্রচার চালিয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, দূরপাল্লার ফ্লাইটসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার উদ্দেশেই এই মহড়া।
এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই যে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে সেটিও পরোক্ষভাবে ওয়াশিংটনকে বোঝাতে চেয়েছিল ইসরাইল। তেল আবিব একার সক্ষমতায় ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ধংসের পরিকল্পনা আঁটছে বছরের পর বছর ধরে।
ইরান কখনোই প্রকাশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালানোর কথা স্বীকার করেনি। তারপরও দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা বন্যা বইয়ে দিয়ে আসছে আমেরিকা। তবে এবার যখন ইসরাইলে প্রায় দুশো মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান-দেশের পরমাণু কর্মসূচির খবর আবারও ট্রেন্ডিং-এ।
সত্যি সত্যিই কি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে? এর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমাদের। কারণ ইসরাইল পাল্টা আঘাত হিসেবে ইরানের পরমাণু স্থাপনা-তেলের প্ল্যান্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার কথাই বলছে বারবার। ওয়াশিংটন বলছে, কোনোভাবেই যাতে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র এবং তেল স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু না করে ইসরাইল।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ২২ বছর ধরে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো ইসরাইল। ভবিষ্যতে এমন সুযোগ নাও আসতে পারে- সেই শঙ্কায় জোরেশোরেই ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আক্রমণের সুযোগ খুঁজছে তেল আবিব। প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রকে সাথে নিয়ে নয়, একাই ইরানের পরমাণু স্থাপনাতে হামলা চালানোর জন্যে মরিয়া বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু এই ঘটনার পর বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ওয়াশিংটন।
ইরানে ইসরাইলে হামলা মানে মুখ থুবড়ে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে নিরাপত্তা। ইসরাইলের হামলার পর বসে থাকবে না তেহরানও। চারদিক থেকে প্রতিরোধের অক্ষকে পুরোদমে কাজে লাগাবে তেহরান। জল থেকে স্থল-আকাশপথ সবদিক থেকে একযোগে হামলা হবে ইসরাইলসহ পুরো পশ্চিমে।
ইরান যে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করছে- সেটির আঁচ পাওয়া গেছে শনিবার ইরান এবং ইসরাইলে একটি অস্বাভাবিক ভূমিকম্প থেকেও। শনিবার রাতে ইরান এবং ইসরাইলে একটি মাঝারি ভূমিকম্প হয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুই দেশেই সামান্য সময়ের পার্থক্যে ভূমিকম্পটি অনুভুত হয়েছে।
রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৪ দশমিক ৫। স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি ঘটে এবং এর কেন্দ্রস্থল ছিল মাটি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলেও সর্বমহলে চলছে জল্পনা কল্পনা।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদেরও শঙ্কা, এটি ভূমিকম্প নয় বরং ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান। যার কারণে দুই দেশেই অনুভূত হয়েছে কম্পন। সেটির ইঙ্গিত দিয়েছে ইরান নিজেও।
ইরান অবজারবারের এক্সে দেওয়া বার্তায় আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতিনিধি বলেছেন, প্রয়োজন হলে আমরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবো। ইসলামের দৃষ্টিতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি এবং ব্যবহার জায়েজ নয়। কিন্তু মুসলিম এবং ইরানি জনগণের সাহায্যে প্রয়োজনে সেই উদ্যোগও আমরা নেব। ইরানের সুপরিচিত নাতাঞ্জ এবং ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র। যেগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে।
এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বর্তমানে ইরানের হাতে যে পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত তিনটি পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে তেহরান। এই হাতিয়ার তৈরি করতে হলে ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জানতে হয়।
যার অনেকটাই নাকি আয়ত্ত করে ফেলেছেন পারস্য উপসারের তীরের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। যদিও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির নাগাল পায়নি মোসাদও। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরমাণু স্থাপনা। এমনকি ইসরাইলি হামলা থেকে বাঁচতে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারেও গবেষণা চালায় তেহরান। ফলে আকাশপথে বোমা হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সগুলো ধ্বংস করা ইসরাইলের পক্ষে কঠিন।