দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হয় আন্তর্জাতিক চাপ। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় ফিলিস্তিনের ভূমিতে প্রতিষ্ঠা পায় ইসরায়েল। এ সময় উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের আড়ালে নিজেদের সীমানা বাড়াতে শুরু করে ইসরায়েল।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে একটা হলো ফিলিস্তিনের বাত্তির। সেখানকার জলপাই বাগান এবং আঙুরক্ষেতের জন্য পরিচিত এই গ্রাম। এখানে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক ঝর্ণার পানি। কয়েক শতাব্দী ধরে এইভাবেই বয়ে চলেছে এখানকার মানুষের জীবন।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকৃতির কোলঘেঁষা এই গ্রামই অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের সর্বশেষ ‘ফ্ল্যাশপয়েন্টে’ পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের আড়ালে ভূমি দখল করে এখান দিয়েই সীমানা বাড়িয়ে চলেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল এই অঞ্চলে একটা নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন বা ‘সেটলমেন্ট’-এর অনুমোদন দিয়েছে। এই নতুন বসতির জন্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে বহু মানুষের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি। শুধু তাই নয়, অনুমোদন ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে নতুন ইসরায়েলি ফাঁড়িও।
বাত্তিরকে ঘিরে বসতি স্থাপনকারীদের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউনেসকো। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ জাতীয় ‘সেটলমেন্ট’কে অবৈধ হিসেবে দেখা হয়। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ ইসরায়েল।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বেটসেলেমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের কারণে অন্তত পশ্চিম তীরের ১৮টা গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
জাতিসংঘের হিসাবে, গত বছর সাতই অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে পশ্চিম তীরে ৫৮৯ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে ইসরায়েলির বাহিনীর গুলিতে আর অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বসতি স্থাপনকারীদের হাতে।
গত অক্টোবরে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের রকেট হামলার পর থেকে ফিলিস্থিনিদের জমি দখল করে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে ‘গতি এসেছে’ বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তার কারণ যারা জমি দখল করছেন, যুদ্ধের ডামাডোলে তাদের প্রশ্ন করার কেউ নেই।