লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবক নির্যাতন: মামলা দায়ের, তদন্ত চলছে
লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলায় চুরির অপবাদ দিয়ে রহমতউল্লাহ নামের এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন এবং নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনায় মামলার দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী রহমতউল্লাহ নিজেই এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন:
- কাজির দিঘীরপাড় বাজারের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন
- নিজাম উদ্দিন
- সুমন ভূঁইয়া
ঘটনা ঘটে গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের কাজির দিঘীরপাড় বাজারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রহমতউল্লাহকে সন্দেহজনকভাবে আটক করেন। তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে প্রথমে লাঠিপেটা করা হয়। এরপর বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ নেতা মতিন ভূঁইয়ার দোকানের সামনে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে রহমতউল্লাহকে নাকে খত দিয়ে মসজিদ পর্যন্ত হাঁটতে বাধ্য করা হয়। এই অপমানজনক ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, রহমতউল্লাহকে পেছন থেকে একটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনসহ কয়েকজনের হাতে লাঠি দেখা যায়। সুমন নামে এক ব্যক্তি তাকে নাকে খত দিয়ে মসজিদে যেতে বলছেন। নাকে খত দেয়ার পরপরই পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাত করার দৃশ্য ফুটেজে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, রহমতউল্লাহ চুরির উদ্দেশ্যে একটি বন্ধ দোকানে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। তাকে হাতেনাতে ধরার পর উত্তেজিত জনতা নিজেরাই বিচার করার চেষ্টা করে এবং এই অমানবিক কাজ ঘটায়।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোন্নাফ জানান, যমুনা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মিডিয়ার চাপ ও জনমতের প্রতিক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
এ ঘটনা শুধু অপরাধের শিকার ব্যক্তির প্রতি অন্যায় নয়, বরং এটি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতার একটি উদ্বেগজনক উদাহরণ। জনসচেতনতা এবং প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা ছাড়া এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড রোধ করা সম্ভব নয়।