বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মণিপুর কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যপাল রদবদল: রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টিতে নতুন কৌশল

মণিপুর কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যপাল রদবদল: রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টিতে নতুন কৌশল

মণিপুর গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকার দেশের পাঁচ রাজ্যের রাজ্যপাল পরিবর্তন করেছে

গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকার দেশের পাঁচ রাজ্যের রাজ্যপাল পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে মণিপুর ও মিজোরামের রাজ্যপাল নিয়োগ। এই রদবদল রাজনৈতিক মহলে নতুন কৌশলের ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মণিপুরে নতুন রাজ্যপাল অজয় ভাল্লা দেড় বছর ধরে মণিপুরের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার এবার রাজ্যপাল পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উদ্যোগ নিতে চাইছে বলে ধারণা। মণিপুরের নতুন রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ ও সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। মোদি আমলে চারবার মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়া এই আমলা গত আগস্টে অবসর নেন। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে তাঁকে মণিপুরের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রের বিশেষ মনোযোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এর আগে, মণিপুরের রাজ্যপাল ছিলেন মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী নেত্রী অনুসূয়া উইকি। তাঁকে গত জুলাইয়ে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে আসামের রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যই মণিপুরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তবে উপদ্রুত মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার সম্ভাবনার কথা এখন জোরালো হচ্ছে। অজয় ভাল্লার নিয়োগ সম্ভবত সেই প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।

মিজোরামে সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং মণিপুরের পাশাপাশি মিজোরামও কেন্দ্রের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। মণিপুরের উত্তেজনার প্রভাব কিছুটা মিজোরামে পড়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন কেন্দ্রকে আরও চিন্তিত করে তুলেছে।

মিয়ানমারের চিন প্রদেশের জনগণের অনেকেই আগে থেকেই মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের সঙ্গে মণিপুরের কুকি সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিজোরামের রাজ্যপাল হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ভি কে সিংকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভি কে সিং ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে জয়ী হয়ে মোদি সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

ওড়িশা ও বিহারে পরিবর্তন মিজোরামের আগের রাজ্যপাল হরিবাবু কাম্ভামপতিকে পাঠানো হয়েছে ওড়িশার দায়িত্বে। ওড়িশার রাজ্যপাল রঘুবর দাসকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে রঘুবর দাস কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে গৌতম আদানির গোড্ডায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিশ্চিত করেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

অন্যদিকে, বিহারে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কেরালার প্রাক্তন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানকে। তিনি বিহারের দায়িত্বে আসার আগে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সরকারের সঙ্গে একাধিক ইস্যুতে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন।

রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত এই রদবদল শুধুমাত্র প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়; বরং রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিশেষত মণিপুর ও মিজোরামে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান শক্তিশালী করার পরিকল্পনা স্পষ্ট। পাশাপাশি, বিহার ও কেরালায় বিজেপির ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণেও এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

guest
0 মতামত সমুহ
Inline Feedbacks
View all comments