সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আগেই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়োগের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একইসঙ্গে, দুদক গঠনের বর্তমান ‘সার্চ কমিটি’ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের সই করা এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনার লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ যেসব সদস্য নিয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’ গঠিত হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের দুর্নীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এই কমিশনের কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন হয়নি। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে তারা নিজেদের রিপোর্ট জমা দেবেন।
এতে আরও বলা হয়– আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি যে, সংস্কার প্রস্তাবনা আসার আগেই সরকার নতুন একটি ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন’-এর কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থাতেই সরকার কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী ও একটি অনভিপ্রেত পদক্ষেপ বলে জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও বিচারপতিদের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিটি দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থাকার পরও নতুন করে কোনো প্রকার সংস্কার ব্যতীত দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের উদ্যোগ আমাদের কাছে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কোনো পর্যায়ে কোনোভাবেই অংশগ্রহণ না করা একদল বেসামরিক আমলার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন ও আত্মস্বার্থ বিসর্জন করেননি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের জন্য নিয়োজিত ‘সার্চ কমিটি’ আজই বাতিল করার দাবি জানাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আমাদের দাবি– ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব মূল্যায়নের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন করে দুদকের চেয়ারম্যানসহ অপরাপর কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায়, সংস্কারের আগে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ব্যাপারে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ দিতে পাঁচ সদস্যের বাছাই (সার্চ) কমিটি গঠন করে সরকার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন– হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও মো. মাহবুব হোসেন (সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব)।