<

বদলায়নি পুলিশ, ফের আসছে অভিযোগ

জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে ঠিক কত সদস্যের, সে হিসাবটাও স্পষ্ট করতে পারেনি বাহিনীটি।

৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরাতনরা গিয়ে চেয়ারে এসেছে নতুন মানুষ। কিন্তু মাঠের চিত্র পরিবর্তনের আগে নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। তাতে মানুষ বদলালেও বদলায়নি আচরণ।

এর মধ্যে জুলাই-আগস্টের ঘটনায় পুলিশের কয়েক শ’ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রায় ১২৪ জনের একটি তালিকাও করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বিভিন্ন মামলায়। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের মামলারও আসামি আছে কয়েকজন। এসব মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটে অধিকাংশ সদস্যের। তাতে মাঠের কাজে মনযোগের সময় কোথায়, সেই প্রশ্নও আছে?

মামলা আতঙ্কের পাশাপাশি বদলি বাণিজ্যের অভিযোগও এরইমধ্যে উঠেছে। আর বদলি-পদায়নে প্রাধান্য পাচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয় ও বিশেষ কর্মকর্তাদের আনুকূল্য। আর এসবের মধ্যেই বাহিনীটির হারানো মনোবল ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ চলছে।

বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর বলেন, বিভিন্ন মামলায় যারা আসামি, তাদেরকে কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে।

পট পরিবর্তনের পর ধারণা করা হয়েছিল, আচরণেও পরিবর্তন হবে বাহিনীতে। কিন্তু সে আশায় অনেকটা গুড়েবালি। কেউ কেউ ভোল পাল্টে রাতারাতি হয়ে গেছেন বঞ্চিত ও আওয়ামী বিরোধী কর্মকর্তা। বিশ্লেষকরা বলছেন, শত বছরের পুরনো সংস্কৃতি থেকে এখনও বের হতে পারেনি পুলিশ। তাই আগের হালের পথেই হাঁটছে বাহিনীটি। কোনও সংস্কারই কাজে আসবে না যদি আলাদা কমিশন না হয়।

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বললেন, যেহেতু পুলিশকে আমরা পেশাদারিত্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চাচ্ছি এবং সেভাবেই তাদেরকেই মূল্যায়ন করছি, তাই পরিচালনার সকল প্রেক্ষাপটটা পুলিশের হাতে দেয়া উচিত। তারা নিজেদেরকে কীভাবে পরিচালনা করবে, সেটা শুনে কাঠামোগত পরিবর্তনটা সেভাবেই হওয়া উচিত।

অপরাধ বিশ্লেষক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না পুলিশ। পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে পারছে না। তাদের উপরে যারা সরকারি দল কিংবা প্রভাবশালী (এখন তো সরকারের বাইরেও প্রভাবশালী রয়েছে) তারা পুলিশকে চালাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে আমরা পুলিশের যে অনিয়ম-দুর্নীতি দেখি, এটার জন্য পুলিশ দায়ী।

দীর্ঘদিনের এসব জঞ্জাল ও পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে সংস্কার খুবই জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রান্সপেরেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইতেখারুজ্জামান বলেন, কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। র্দীঘদিন ধরে পুঞ্জীবিত চর্চার পরিবর্তন হয়নি। সেই জায়গাটা চট করে চলে আসবে, পরিবর্তন হবে তা আশা করা কঠিন। পুলিশের আইনটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। বাহিনীটির নিয়োগ, পদোন্নতির বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে বের করে নিয়ে এসে একটি স্বাধীন সত্ত্বার ওপর হস্তান্তর করতে হবে।

এসবের বাইরে সবকিছু তদারকির জন্য আলাদা আরেকটি কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।