<

৮০ শতাংশ এলাকায় নেই পয়োনিষ্কাশন লাইন

রাজধানীতে পানি সরবরাহের পাশাপাশি পয়োনিষ্কাশন সেবা দেওয়ার দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসার। অথচ রাজধানীর ৮০ শতাংশের বেশি এলাকায় পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাই নেই। কাগজে কলমে যে ২০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার পয়োনালা রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন অকেজো। ফলে অধিকাংশ পয়োবর্জ্য কোনো না কোনো পথে খাল ও নদীতে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা পানির সমপরিমাণ পয়োনিষ্কাশন (সুয়ারেজ) বিল ঠিকই আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। ওয়াসার কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা এ খাতে আদায় করেছে ওয়াসা।   

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো ধরনের সংস্কারকাজ না হওয়ায় ওয়াসার বিদ্যমান পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে। ঢাকা ওয়াসা নিজেদের তৈরি মহাপরিকল্পনাতেই পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। পয়োনিষ্কাশনের জন্য ২০১৩ সালে মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ঢাকা ওয়াসা। এতে বলা হয়, পয়োবর্জ্য পরিবহনের প্রধান পাইপলাইন ‘ট্রাংক সুয়ারস’ নামে পরিচিত। ঢাকা ওয়াসার তিনটি ট্রাংক সুয়ারস আছে। এই লাইনগুলোর বেশির ভাগ এখন আর কার্যকর নেই।

গত ছয় বছরের আয়ের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি পয়োনিষ্কাশন বাবদ আয় করেছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ২৩৮ কোটি ২৫ লাখ, ২০১৭ সালে ২৭৬ কোটি ৭৯ লাখ, ২০১৮ সালে ১১৮ কোটি ৭২ লাখ, ২০১৯ সালে ৩৩৩ কোটি ৩৫ লাখ, ২০২০ সালে ৩৪১ কোটি ৭৯ লাখ এবং ২০২১ সালে ৩৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আয় করে প্রতিষ্ঠানটি।

ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগরী এলাকায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পানি সরবরাহের লাইন রয়েছে। তবে পয়োনিষ্কাশনের লাইন রয়েছে মাত্র ৯৩০ কিলোমিটার এলাকায়।

তাদের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে মহানগরীর কিছু এলাকায় পয়োনিষ্কাশন নালা তৈরি হয়। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নালা তৈরি হলেও শহর যেভাবে প্রসারিত হয়েছে, সেভাবে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি মিশছে খাল, নালা ও লেকে। দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১০টি অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি অঞ্চলে স্যুয়ারেজ লাইন আছে। বাকি চারটি অঞ্চলে আংশিক স্যুয়ারেজ লাইন রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব স্যুয়ারেজ লাইনে উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় অনেকটা বিকলের পথে। ওয়াসার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নথিতে এসব লাইন বিকল হওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে। তারা বলছেন, বর্তমানে ওয়াসার চারটি অঞ্চলে স্যুয়ারেজ লাইন নেই। এ চারটি অঞ্চল হলো বৃহত্তর উত্তরা, বৃহত্তর মিরপুর (অঞ্চল ৪ ও ১০) ও বারিধারা এবং আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৮)। আংশিক স্যুয়ারেজ লাইন আছে লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৩), মহাখালী, গুলশান, তেজগাঁও ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৫), জুরাইন-যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৭) এবং মতিঝিল-খিলগাঁও ও আশপাশের এলাকা (অঞ্চল-৬)। তবে এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি ভবনের বিপরীতেই স্যুয়ারেজের বিল আদায় করছে ঢাকা ওয়াসা। এমনকি পানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যুয়ারেজ বিলও বছর বছর বাড়িয়েছে সংস্থাটি।

ধানমন্ডির একটি বাড়ির পানির বিল থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে পানির বিল ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৩ টাকা। পানির বিলের সঙ্গে সমপরিমাণ ৫ হাজার ৪৩ টাকা ধরা হয়েছে স্যুয়ারেজ বিল। বাড়ির মালিকের অভিযোগ, স্যুয়ারেজ লাইন না থাকলেও কেন সমপরিমাণ বিল দিতে হবে আমাদের। বেশির ভাগ লাইনই অকেজো। অথচ প্রতি বছর এ বিল বাড়িয়েছে ওয়াসা। আর আমরা প্রতি মাসেই এ বিল দিয়ে যাচ্ছি। 

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বিল আদায় সম্পর্কে বলেন, আমাদের কয়েকটি অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় পয়োবর্জের লাইন আছে, সে অনুযায়ী বিল আদায় করা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ এলাকায়ই পয়োনিষ্কাশন লাইন নেই। এ নিয়ে আমাদের অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ এখন বন্ধ আছে, আশা করছি কাজগুলো শেষ হলে এ সমস্যা সমাধান হবে।