যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে জেতার এক সপ্তাহ পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন দায়িত্ব কেমন হবে, সে অবয়ব ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সময়ের মধ্যে ১২ জন নতুন কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করেছেন। তাঁরা হোয়াইট হাউস ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন। ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রাম্প যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে বোঝা যায়, আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অভিবাসন ও পররাষ্ট্রনীতির ওপর তাঁর থাকবে বিশেষ মনোযোগ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের শুরুটা ছিল খানিকটা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই এখন নিজের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের ভিত রচনায় তিনি কাজ করছেন। এ জন্য আরও বেশি স্পষ্ট পরিকল্পনা ও জনশক্তি নিয়ে এগোচ্ছেন। তাঁর কর্মপরিকল্পনা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তৎপরতা সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে:
অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ
ট্রাম্প এমন কয়েকজন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনে জেতার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাখ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী বের করে দেওয়ার তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কোনো বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা নয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাছাই করা কর্মকর্তাদের একজন স্টিফেন মিলার। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও বক্তৃতা লেখক। এখন ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের নীতিবিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গণহারে অভিবাসী বিতাড়নে তিনি যেকোনো পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে, যা থেকে বাদ পড়বে না অনিবন্ধিত ও বৈধ অভিবাসী কোনো পক্ষ। ট্রাম্পের প্রথম দফায় অভিবাসী বিষয়ে তাঁর প্রশাসনের গৃহীত কিছু কঠোর নীতিতে মিলার যুক্ত ছিলেন।
নতুন কর্মকর্তাদের আরেকজন থমাস হোম্যান। প্রথম দফার ট্রাম্প প্রশাসনে তিনি ছিলেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে আটক অনিবন্ধিত পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার ট্রাম্পের নীতিকে তিনি সমর্থন করেছিলেন। এবার বৃহত্তর দায়িত্ব—ট্রাম্পের ‘ইমিগ্রেশন জার’ হয়ে ফিরলেন তিনি।
গত জুলাইয়ে রক্ষণশীলদের (ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি) এক সম্মেলনে হোম্যান বলেছিলেন, ‘এ দেশে আমি সবচেয়ে বড় অভিবাসী উচ্ছেদ বাহিনী পরিচালনা করব, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’
সমালোচকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ট্রাম্পের গণহারে অভিবাসী বিতাড়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে খরচ হতে পারে ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) মার্কিন ডলার। তবে গত সপ্তাহে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘খরচ কোনো ব্যাপার নয়।’
ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘যখন (অবৈধ অভিবাসীদের হাতে) মানুষ মারা যাচ্ছেন ও খুন হচ্ছেন, যখন মাদকসম্রাটেরা (অবৈধ অভিবাসীরা) দেশকে ধ্বংস করে ফেলছেন এবং এখন তাঁরা নিজেদের দেশে ফেরত যাচ্ছেন (ফেরত পাঠানো হচ্ছে)। কেননা, তাঁরা এখানে থাকতে পারছেন না। তাই এ ক্ষেত্রে খরচের কোনো বিষয় নেই।’
চীনবিরোধীদের প্রাধান্য
রিপাবলিকানদের অনেকের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্যে চীনই হলো একক হুমকি আর সেটি অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প অনেক বেশি সতর্ক। তাই তো বাণিজ্যিকভাবে তিনি তাঁর চীনা সমালোচকদের কোনঠাসা করতে চান। এর অংশ হিসেবে নিজ পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারক দল চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কর্মকর্তাদের দিয়ে পূর্ণ করছেন তিনি।
অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে চীনকে মোকাবিলায় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফ্লোরিডার কংগ্রেসসদস্য মাইক ওয়ালৎসকে। মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তিনি। এখন তিনি পেলেন হোয়াইট হাউসের পররাষ্ট্রনীতি–বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব। ওয়ালৎস বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এখন ‘শীতল যুদ্ধ’ চলছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক বর্জন করতে যেসব কংগ্রেস সদস্য প্রথম ডাক দিয়েছিলেন, তিনি তাঁদের একজন।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের বেছে নেওয়া নারী কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিক গত অক্টোবরে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘নির্লজ্জ ও বিদ্বেষপূর্ণ হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ করেন। তাঁর এ অভিযোগের আগে গণমাধ্যমে খবর বের হয়, সাবেক প্রেসিডেন্টের (নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) ফোন থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন চীন–সমর্থিত হ্যাকাররা।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে বেছে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডার এই সিনেটরও কট্টর চীনবিরোধী। হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনাভিযান চালানোর জন্য সাজা হিসেবে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে একসময় চাপ দিয়েছিলেন মার্কো। ওই ঘটনায় ২০২০ সালে তাঁর ওপর চীন সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বাণিজ্য–বিরোধ ও করোনা মহামারি নিয়ে ট্রাম্পের প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক প্রায়ই ছিল বৈরিতায় ভরা। মার্কোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদেও যে দুদেশের সম্পর্ক ভালো যাবে না, সেটি বলাই যায়।