<

আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়ে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ

 

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি’তে হার দিয়ে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়েছে টাইগার’রা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ এ সমতা আনলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।  শারজাহতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।

শনিবার (৯ নভেম্বর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২৮ রানেই হারিয়ে ফেলে প্রথম উইকেট। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয়া তানজিদ হাসান ১৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে ক্যাচ দেন আল্লাহ মোহাম্মদ গজানফরের বলে। এরপর সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত।  

৯৩ বলে ৭১ রানের এই জুটি ভাঙে সৌম্য যখন রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন। ২ চার ও সমান ছক্কায় ৪৯ বলে ৩৫ রান করে আউট হন তিনি। রিপ্লেতে অবশ্য দেখা গেছে, রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন সৌম্য; বল পড়েছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।  

এরপর শান্তর সঙ্গী হন সহ-অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের জুটিও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু হুট করে ৩২ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।  

শুরুটা হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে। ৩৩ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারি হাঁকাননি তিনি, করেন ২২ রান। রশিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে যান মিরাজ। এরপর কিছুটা ধীর ইনিংস খেলা শান্তও বিদায় নেন। নাগাইলিয়া খারোটির বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি নবির হাতে। এর আগে ১১৯ বলে করেন ৭৬ রান।  

এ দু’জনের বিদায়ের পর তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ফেরেন দ্রুত। ১৬ বলে ১১ রানে হৃদয় ও ৯ বলে ৩ রানে আউট হন রিয়াদ। তাদের দু’জনের বিদায়ের পর কিছুটা হাল ধরেন অভিষিক্ত জাকের আলি অনিক ও নাসুম আহমেদ।  

৪১ বলে ৪৬ রানের জুটি ছিল এই দু’জনের। ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান করে আউট হন গজানফার। ১ চার ও ৩ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা জাকের আলি।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের খানিকটা বাইরের ডেলিভারিতে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের পাশ দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তবে নিজের চাওয়া মতো খেলতে পারেননি ডানহাতি ওপেনার। ফলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রানে ফিরতে হয় গুরবাজকে। ডানহাতি ব্যাটারকে ফেরানোর পর আফগানদের চেপে ধরার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। 

পাওয়ার’প্লে আরও ভালো হতো পারতো বাংলাদেশের জন্য। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে রহমত ক্যাচ দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি জাকের আলী অনিক। ফলে সেদিকউল্লাহ ও রহমত মিলে অবশ্য শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়েছেন ভালোভাবেই। তবে তাদের দু’জনের জমে ওঠা জুটি ভেঙেছেন নাসুম আহমেদ। মিরাজের অবিশ্বাস্য ক্যাচে নিজের ফেরার ম্যাচেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন ৩৯ রান করা সেদিকউল্লাহ।

বাঁহাতি ব্যাটার ফেরার পর থেকে আফগানদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন রহমত ও হাশমতউল্লাহ শহীদি। মাঝে সুযোগ তৈরি হলেও উইকেট তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে তাদের দু’জনের জুটি ভেঙেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি পেসারের বলে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন হাশমতউল্লাহ। তবে সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিতে হয়েছে ১৭ রান করা আফগান অধিনায়ককে। পরের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান নাসুম। বাঁহাতি স্পিনারের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। টানা ‍দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাক মারেন ওমরজাই। 

একই ওভারে রহমতকেও ফেরায় বাংলাদেশ। নাসুমের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সামনে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ‍গুলবাদিন নাইব। ডানহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন রহমত। তবে নিজেদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝিতে দু’জনই স্ট্রাইক প্রান্তে চলে যান। এদিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভাঙে বাংলাদেশ। ৭৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে অভিজ্ঞ রহমতকে। এরপর গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ নবির জুটিতে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল আফগানিস্তান। তবে তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন শরিফুল।

প্রথম তিন বলে এক ছক্কা ও চারে ১২ রান দেয়া বাঁহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দেন গুলবাদিন। ডানহাতি ব্যাটার ফেরেন ২৬ রানে। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে নবিকে নিজের শিকার বানান মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের টার্ন করে ভেতরে ঢোকা এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন ১৭ রান করা নবি। একটু পর খারোতেকেও ফেরান মিরাজ। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেছিলেন খারোতে। উইকেটের পেছনে থেকে স্টাম্পিং করতে বাকি কাজটা সারেন জাকের। 

৮ উইকেট হারানো আফগানিস্তানকে জয়ের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি রশিদ খান। মোস্তাফিজের স্লোয়ার আর কাটারে বোকা বনে যান তিনি। বাঁহাতি বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন ১৪ রান করা রশিদ। শেষ ব্যাটার হিসেবে গাজানফারকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন নাসুম। বাঁহাতি স্পিনার এদিন নিয়েছেন ৩ উইকেট। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ ও মিরাজ।