<

নাটক বন্ধের প্রতিবাদে শিল্পকলায় সমাবেশ

সাম্প্রতিক সময়ে নাট্যাঙ্গনসহ শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার ওপর নানা রকম বাধার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হলেন একদল নাট্যকর্মী। এ ধরনের বাধা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মী’-এর ব্যানারে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন– অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেতা ও শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা, বটতলার নাট্য নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কামাল উদ্দিন কবির, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের আলোক পরিকল্পক নাসিরুল হক খোকন, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্যনির্দেশক সাইদুর রহমান লিপন ও অভিনেতা মাহমুদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শিল্পকলায় নাটক প্রদর্শনী বন্ধ বাংলাদেশের নাট্যচর্চার ইতিহাসে এক করুণতম দৃষ্টান্ত তৈরি করে সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মী ও নাগরিকদের শঙ্কিত করেছে। নাটকের দল একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান। সাধারণত সেখানে সব রাজনৈতিক দল-মত ও আদর্শের মানুষের সহাবস্থান থাকে। শিল্পচর্চায় এসব খুব বড় বাধা নয়, বরং এ সহাবস্থান আর সহিষ্ণুতার চর্চাই থিয়েটারের মূল শক্তি।

আর কারও ব্যক্তিগত মতামতের দায় তার দলের ঘাড়ে দেয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি স্বৈরশাসক আমলের আচরণ। বিগত আমলে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসের জেরে তার দলকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে নানাভাবে হেনস্তা ও নিপীড়ন করা হয়েছে। সেই একই চর্চা নতুন বাংলাদেশে চালু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন নাটক বন্ধ করা বা এর দাবি তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

সর্বশেষে নাটকের বন্ধ প্রদর্শনী সাত দিনের মধ্যে ফেরত; সাধারণ নাট্যকর্মী, দর্শক, নাগরিকদের জন্য শিল্পকলাকে উন্মুক্ত করা; শিল্পকলা পরিষদের আমলা নির্ভরতা কমানো; শিল্পকলায় থিয়েটার দলগুলোর প্রদর্শনী বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করার দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি তোলেন বিক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২ নভেম্বর) শিল্পকলা একাডেমিতে ‘দেশ নাটক’ প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে কিছু লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।

পরদিন এক ব্রিফিংয়ে জামিল আহমেদ বলেন, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও আক্রান্ত হতে পারে।

এই ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরাও।