<

আট দফা দাবি আদায় না পর্যন্ত মাঠ থাকবেন

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তির যথাযথ বাস্তবায়নসহ সনাতন সম্প্রদায়ের আট দফা দাবি অস্তিত্ব রক্ষার। যত সরকার এসেছে, কেউ সংখ্যালঘুদের এসব দাবি বাস্তবায়ন করেনি। এখন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ। এবার যত মামলা হোক, হামলা হোক, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়া হবে না।

‘সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা বাস্তবায়নের’ দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গণসমাবেশে এ কথাগুলো বলেন দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা।

শনিবার বিকেলে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীসহ সংখ্যালঘু নেতাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় গণসমাবেশ থেকে।

গণসমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, তাঁরা অস্তিত্ব রক্ষা ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন।

যত সরকার এসেছে, দাবি করা হয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। দাবি আদায় না করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না। আমাদের বিরুদ্ধে যত মামলা দেওয়া হোক, যত হামলা করা হোক, বাড়িঘর লুটপাট করা হোক, দাবি যে করেই হোক আদায় করে ছাড়ব।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাড়িঘর পোড়ানো, দোকানপাট লুটপাট ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো সরকারের উপদেষ্টারা কেউ তা স্বীকার করেননি।’

আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর কোনো শোষণ–বঞ্চনা মেনে নেব না।’

বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, এমনিতেই আমরা বৈষম্যের শিকার। এর মধ্যে সরকারি চাকরি থেকে সংখ্যালঘুদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, বদলি করা হচ্ছে, ওএসডি করা হচ্ছে।

সরকার পতনের পর রাজপথে নামলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের জন্য ভারতের উসকানিতে নামা হয়েছে—এমন মন্তব্য করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক সুস্মিতা কর। তিনি বলেন, আমরা কারও দালালি করতে রাজপথে নামিনি। এখন একটাই দফা, তা হলো আট দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়সহ অনেকে বক্তব্য দেন।

গণসমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ–দাদার’, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।  

ঐক্য পরিষদের ৮ দফা

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায়’ ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরেন। যদিও সরকার পতনের পর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছিল, তার সঙ্গে ঐক্য পরিষদের আট দফা দাবির কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

ঐক্য পরিষদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন করা, পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করা প্রভৃতি।

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র পুনর্গঠনে প্রস্তাবনা

গণসমাবেশে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনে ছয় দফা প্রস্তাবনাও তুলে ধরেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। এর মধ্যে রয়েছে সব রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সংসদের প্রতিটি অধিবেশনের সূচনায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে সব ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম সংবলিত ২ক অনুচ্ছেদের বিলোপ করা; সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় শিক্ষায়তনের উন্নয়ন ও বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করা; ধর্মীয় বাজেটে বিরাজিত বৈষম্য দূর করে আমানতের সুদের টাকায় পরিচালিত ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তর করা; সাম্প্রদায়িক উসকানি ও কটূক্তির প্রতিকারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাব্যবস্থায় অসাম্প্রদায়িকতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা।