<

মাঠে খেলা পাবেন তো সাবিনারা

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরলে সংবর্ধনার ধুম পড়ে গিয়েছিল। সংবর্ধনা নিতে নিতে একসময় মেয়েরা ক্লান্তই হয়ে পড়েছিলেন।

টানা দ্বিতীয়বার মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে আসার পর বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে ক্রীড়া উপদেষ্টা গোটা দলকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। মেয়েরা আরও কিছু সংবর্ধনা পেতে পারেন। সংবর্ধনা, অভিনন্দন, আর্থিক পুরস্কার; সবই তাঁদের প্রাপ্য।

কিন্তু প্রথমবার সাফ জেতার কদিন পরই সব চলে যায় আড়ালে। ঘরোয়া দূরে থাক, মেয়েরা ৯ মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচও পাননি। বলা ভালো, তাঁদের জন্য ম্যাচ আয়োজন করেনি বাফুফে। উপরন্তু আর্থিক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি। নিয়মিত ঘরোয়া ফুটবল না হওয়া, আর্থিক অনিশ্চয়তা—নানা রকমের হতাশা নিয়ে দল ছেড়ে গেছেন সাফজয়ী ডিফেন্ডার আঁখি, ফরোয়ার্ড স্বপ্নারা।

মেয়েদের ধরে রাখতে দরকার নিয়মিত ঘরোয়া ফুটবল। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে নিয়মিত লিগ মানে দূর কল্পনা। ছেলেরা নিয়মিত লিগ-টুর্নামেন্ট পেলেও মেয়েরা এক শ হাত পেছনে। তাঁদের জন্য ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টই নেই। লিগ আছে নামকাওয়াস্তে। তা–ও সর্বশেষ লিগে বসুন্ধরা কিংস দল না গড়ায় মেয়েরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েকটি দলকে হাতেপায়ে ধরে লিগে খেলাতে রাজি করানো হয়। এটাই হলো দেশের নারী ফুটবলের বাস্তব অবস্থা। জুনিয়রদের অনেকে একটা পর্যায়ে হারিয়ে যাচ্ছেন। সেই হারিয়ে যাওয়ার খবরও কেউ রাখে না।

এ অবস্থার উন্নতি চান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তিনি মনে করেন, বছরে শুধু কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেই হবে না। দরকার ঘরোয়া সূচি। তাই তো সাবিনা দাবির সুরেই প্রথম আলোকে বলছেন, ‘মেয়েদের জন্য বার্ষিক ক্যালেন্ডার থাকা উচিত, যেখানে তাদের শিডিউল জানা থাকবে। সে জানতে পারবে, তৈরি থাকবে কবে কোন খেলা। লিগ করা, মাঠে খেলা রাখা—এগুলোই আমরা বাফুফের নতুন সভাপতির কাছে চাই।’

সাবিনার ক্ষেত্রে অনেক সময় বলা হয়, তাঁর পারফরম্যান্স একটু নিচের দিকে। এবারের সাফেও সেটা দেখা গেছে। গত সাফের সর্বোচ্চ ৮ গোল করা ও টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হওয়া সাবিনা এবার লক্ষ্যভেদ করতে পেরেছেন দুবার। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য কেন নিচের দিকে সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাতক্ষীরার মেয়ে টেনে এসেছেন দুর্বল ঘরোয়া কাঠামোর কথাই, ‘আমার যেটা দরকার, সেটা না দিলে আমার কাছ থেকে তো ফল পাবেন না। আমার চাওয়া হচ্ছে মাঠে ম্যাচ রাখতে হবে। সারা বছর যদি আপনি আমাকে ক্যাম্পে রাখেন, ম্যাচ না দেন, আর এক–দুই বছর পর যদি কোনো টুর্নামেন্টের আগে বলেন, “সাবিনা তোমাকে ১০ গোল করতে হবে”; সেটা তো সম্ভব নয়। কাজেই মেয়েদের নিয়ে মন্তব্য করার আগে ভাবা উচিত, খেলোয়াড়দের প্রাপ্যটা দিচ্ছেন কি না।’

কোচ পিটার বাটলার নারী দলের দায়িত্বে আর থাকতে চান না। বিদায়ের সময় তিনি মেয়েদের জন্য যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটাও সাবিনার কথার সুরই। পরশু কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদকে বাটলার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, খুবই ভালো কথা। কিন্তু ঘরোয়া লিগটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে হবে। মেয়েদের ম্যাচের মধ্যে রাখার বিকল্প নেই। শুধু বাফুফে ভবনে বছরব্যাপী ক্যাম্প করলেই হবে না। ঘরোয়া লিগ-টুর্নামেন্ট খুবই দরকার।’

মেয়েরা বাফুফে থেকে বেতন পান না নিয়মিত। সাবিনার ভাষায়, ‘বেতন ঠিকই দেয়। তবে ২/৩ মাস গ্যাপ পড়ে যায়।’ এখনো সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের বেতন বাকি তাঁদের। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে সাফ জিতে এসেও মেয়েরা আর চান না গতবারের মতো ৯ মাস খেলাবিহীন থাকতে। বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল মেয়েদের জন্য নিয়মিত ঘরোয়া ফুটবলের ব্যবস্থা কি করবেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানা গেল না। বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েই কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে তিনি সিউলে গেছেন এএফসির পুরস্কার অনুষ্ঠানে।