<

সমাজ ও রাষ্ট্র বদলের এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেছেন, এবারের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র ও সমাজ বদলের যে সুযোগ এসেছে, তার সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে সংস্কার সমর্থক রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশবাসী ক্ষমা করবে না।

বাংলাদেশ জাসদের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও প্রীতিমিলনী অনুষ্ঠানে দলটির সভাপতি এসব কথা বলেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাম্প্রতিক ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, বাংলাদেশ জাসদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের শহীদ ও প্রয়াত নেতা-কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় অংশ নেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের কো-আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা দীপায়ন খীসা।

শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘দেশে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে না আনতে পারলে তা সবাইকে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে পারে।’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের দাবি মেনে নির্বাচনের রোডম্যাপ সরকারের দিয়ে দেওয়া উচিত। ট্রাইব্যুনালে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন ও গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তার প্রতি নজর রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘৫২ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনে আমরা কখনো ভুল করিনি এমন নয়। তবে সামরিক স্বৈরাচার ও শেখ হাসিনা গংয়ের ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বমূলক শাসনের নির্লজ্জ দালালি কখনো করিনি।’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক জঙ্গি-সন্ত্রাস, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকল্পে গঠিত ১৪ দলে আমরা শরিক ছিলাম। অংশগ্রহণমূলক পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের নির্বাচনের নৈতিক ঘাটতি পূরণের দাবি আমরা করেছিলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেভাবে আগের রাতে ভোট হয়েছে, তা প্রথম আমরাই স্পষ্ট করে বলেছি।’

শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকার কোনো কথায় কর্ণপাত না করায় আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতির স্বার্থে ১৪ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি বলেন, ‘জুলাই ছাত্র- জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার উচ্ছেদের পর জনমনে স্বস্তি এসেছে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারে। তবে ভবিষ্যৎ রাজনীতি-অর্থনীতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে জনমনে এখনো সংশয় রয়েছে। তার কারণ, দেশে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে।’

শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দখলদারত্বের হাতবদল হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে দখলদারত্বের নতুন বন্দোবস্ত কায়েম হয় কি না তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। নয়া ফ্যাসিবাদ, নয়া দখলবাজ, নয়া লুটেরাদের শাসন আমরা বরদাশত করতে পারি না।’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনের শক্তি এবং সশস্ত্রবাহিনী প্রধানের ইতিবাচক অবস্থান দেশকে স্বৈরশাসনের হাত থেকে আপাতত মুক্ত করেছে। তবে সংগ্রামী ছাত্রদের ইতিহাস–সচেতন ও সুশৃঙ্খল বলে মনে হয়নি।’

শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আড়ালে সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হামলা অন্যায় হয়েছে; বঙ্গবন্ধুর বড় ভাস্কর্য ভাঙাও ঠিক হয়নি। ইতিহাস–সচেতন হলে শিক্ষার্থী নেতৃত্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো ভূমিকা রাখতে পারত।’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি আরও বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজেছে। সংবিধান ও শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য তারা ওঁৎ পেতে বসে আছে। একেবারে নতুন করে সংবিধান লেখার সিদ্ধান্ত আসলে তাঁদের সুযোগ করে দেবে। এ জন্য আমরা বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করার কথা বলছি।’