<

আসামির নামের সাথে মিল থাকায় ফটো সাংবাদিক আটক, পরে ছেড়ে দিলো পুলিশ

নামের মিল থাকায় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিক মেহেদী হাসান সাগরকে আটক করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তিনি সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের ছাদখোলা বাসযাত্রার ছবি তোলার জন্য অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে ছিলেন। তবে পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রাতে শাহবাগ থানা থেকে সহকর্মীদের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এর আগে, সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গণমাধ্যমকে জানায়, মেহেদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ছাত্রলীগ শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে ডিএমপি শাহবাগ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে।

মেহেদি হাসান সাগরের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা শহরের গুলশান পাড়া এলাকায়।

জানা গেছে, যে মামলায় ফটো সাংবাদিক সাগরকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মামলাটির ১৩৪ নম্বর আসামি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্র মেহেদি হাসান সাগরের নাম রয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তার পরিচয় দেয়া রয়েছে। এদিকে ডিএমপি’র ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে ‘হল ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগরকে কাকরাইল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সাংবাদিক মেহেদি হাসান সাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে হলে ওঠার প্রয়োজনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হলেও কখনোই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। এজাহারে উল্লেখিত আসামি তারই সহপাঠী। জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা ট্রিবিউন ছাড়াও এপি’সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার হয়েও তিনি কাজ করেন বলে জানান তার পরিবার।

সাগরের সহপাঠীরা জানায়, ওই মামলাটির ১৩৪ নম্বর আসামি হচ্ছেন, হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগর। আর ফটো সাংবাদিক সাগর হল ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। আন্দোলনের পুরোটা সময় ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছেন সাগর। আর হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগরকে ক্যাম্পাসে রাম দা হাতে দেখা গিয়েছিল তখন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক সাগরকে ধরিয়ে দিতে পোস্টারও করা হয়। সেখানে আসামি সাগরের ছবিও দেয়া ছিল।

গ্রেফতারের পরই এই বিষয়ে ছাত্র আন্দোলনের ছবি তুলে আলোচিত চিত্র সাংবাদিক জীবন আহমেদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, যে ছেলেটি জুলাইয়ে ক্যামেরা হাতে ছোটাছুটি করতো, আজ সেই ছেলেটা হত্যা মামলার আসামি!

সাংবাদিক সাগরের বাউফল উপজেলার বাড়িতে কথা হয় তার বাবা সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিনের সাথে। তিনি সাগরের গ্রেফতার ও মুক্তির বিষয়টি যমুনা নিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতে চাইলে ছাত্রলীগ করা বাধ্যতামূলক ছিল। সাগর আমাকে জানালে আমি বলেছিলাম হলে থাকতে এবং সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে। আমরা পরিবারের কেউ রাজনীতির সাথে জড়িত না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আমার ছেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছে ও ভিডিও করেছে।

সাগরের প্রতিবেশী ও স্থানীয় সাংবাদিক শিবলী সাদেক বলেন, সাগর সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ছাত্রদের প্রতি তার সমর্থন আমরা সরাসরি দেখেছি এবং জানি।