<

আন্তর্জাতিক শিল্পীদের পথে হাঁটছে নেমেসিস

সাত বছর পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে আসছে ‘নেমেসিস’। কয়েকটি গান প্রকাশের পর নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যালবামের নাম প্রকাশ করা হবে, এমনটাই জানালেন ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য জোহাদ রেজা চৌধুরী। তাঁর ভাষ্যে, গান প্রকাশ করলেও অ্যালবামের নাম কোনটা হবে, সেটা নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাই না। তবে এটা জানিয়ে রাখলাম, যে নামটা রাখা হয়েছে, জানার পর সবাই বুঝবেন, কেন এমন নাম রাখা হয়েছে।

২৫ বছরে নেমেসিস ৩টি অ্যালবাম করেছে। সম্প্রতি চতুর্থ অ্যালবামের দুটি গান প্রকাশ করেছে। প্রথম গানের শিরোনাম ‘ঘোর’, দ্বিতীয়টি ‘ভাঙা আয়না’। নতুন অ্যালবামের গানগুলোর কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন ব্যান্ডের ভোকাল ও গিটারিস্ট জোহাদ রেজা চৌধুরী। একটা করে গান প্রকাশ ও অ্যালবামের নাম প্রসঙ্গে জোহাদ বলেন, ‘আমাদের এই অ্যালবামে ১০টা গান আছে। প্রকাশিত হয়েছে দুটো। আরও দুই–তিনটি গান প্রকাশের পর নামটা আমরা প্রকাশ্যে আনব। আমরা এখন দেখি, আন্তর্জাতিক শিল্পীরা পুরো অ্যালবাম প্রকাশের আগে অ্যালবামের তিন–চারটা গান প্রকাশ করে। আমরাও সেই একই পথে হাঁটছি।’

নতুন অ্যালবামের গান প্রসঙ্গে জোহাদ বলেন, ‘সাউন্ডওয়াইজ আরেকটু নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ইলেকট্রনিক মিউজিক খুব পছন্দ করি। তাই সেই সাউন্ডগুলো নতুন গানে ইনকরপোরেট করার চেষ্টা করেছি। প্রতিটা গান লিরিকস অনুযায়ী আরও বেশি আপন মনে হয়েছে। কারণ, এসব গানের বেশির ভাগই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বানানো। ২৫ বছর ধরে নেমেসিস আছে, তাই আরেকটু নিরীক্ষাধর্মী কাজ না করলে নিজেদের মধ্যে অনুতাপ থেকে যাবে ভেবেছি।’

চতুর্থ অ্যালবাম প্রকাশ উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে নেমেসিসের বেশ কিছু কনসার্টের পরিকল্পনা আছে। সত্যি বলতে কি, গেল কয়েক সপ্তাহেই একাধিক কনসার্টে পারফর্ম করেছে তারা। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময়ও সরব ছিলেন ব্যান্ডের ভোকাল জোহাদ। ‘গণজোয়ার’ গানটি আন্দোলনকারীদের উদ্দীপ্ত করেছে বলে জানালেন জোহাদ। তবে আন্দোলন–পরবর্তী একাধিক কনসার্টের অভিজ্ঞতা সুখকর না। কয়েকটি কনসার্টে ২০–৩০ জনের দল বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, পণ্ড হয় কনসার্ট।

আয়োজক ও অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ টেনে জোহাদ বলেন, ‘আয়োজকদের জন্য খুব খারাপ লেগেছে , তারা যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছিল যেন এ রকম কিছু না ঘটে। খারাপ লাগছে তাদের জন্য, যারা টিকিট কেটে শোটি উপভোগ করছিল।’ ২৫ বছরের পেশাদার সংগীতজীবনে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কখনো হয়নি এই ব্যান্ড, এমনটাই জানিয়েছেন জোহাদ।

১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে ‘নেমেসিস’। ২০০৫ সালে আসে তাদের প্রথম একক অ্যালবাম অন্বেষণ। ২০১১ সালে দ্বিতীয় অ্যালবাম তৃতীয় যাত্রা। ২০১৭ সালে গণজোয়ার। আর ২০২৪–এ এসে ৪ নম্বর অ্যালবামের প্রথম দুটি গান প্রকাশিত হয়েছে। মজার বিষয় হলো, প্রথম তিনটি অ্যালবামই প্রকাশিত হয় ছয় বছর পরপর। যদিও এটাকে কাকতালীয়ই বলছে তারা! তৃতীয় যাত্রার জন্য সেই বছরের শ্রেষ্ঠ ব্যান্ড (ক্রিটিক) হিসেবে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ পায় নেমেসিস। অ্যালবামের ‘কবে’ গানটি  তাদের আলোচনায় নিয়ে আসে। গানটির ভিডিও বেশ সমাদৃত হয়। একই বছর ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’-এর শ্রেষ্ঠ মিউজিক ভিডিওর নমিনেশন পায় এটি। তাদের শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম—‘বীর’, ‘নির্বাসন’, ‘তৃতীয় মাত্রা’, ‘এগিয়ে যাও’, ‘গণজোয়ার’ প্রভৃতি।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের ব্যান্ডগুলোর মধ্যে ‘নেমেসিস’ অন্যতম। তরুণ শ্রোতাদের হৃদয়ের এত কাছাকাছি কীভাবে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, এমন প্রশ্নে ব্যান্ড সদস্যদের ভাষ্য, ‘আমাদের গানের মধ্যে মিথ্যা কিছু নেই। মনে যেটা আসে, সেটাই আমরা মিউজিকে ফুটিয়ে তুলি। তার ওপর কথা বসানো হয়। এই জায়গাটায় হয়তো শ্রোতাদের সঙ্গে মিলে যায়। যার ফলে সবাই পছন্দ করে।’

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মিলিয়ে ২৫ বছরের ভ্রমণটা কেমন ছিল, এমন প্রশ্নে জোহাদ বলেন, ‘এটা এককথায় অবিশ্বাস্য একটা অনুভূতি! এত বছর আমরা একসঙ্গে গান করব, মানুষের এত ভালোবাসা পাব ভাবিনি। শুরুতে ছোট ছোট শোতে বাজাতাম। সেখানে আমাদের গান শুনত কাছের মানুষ আর বন্ধুরা। নিজেদের চেষ্টা আর শ্রোতাদের ভালোবাসায় আমরা আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। কাজ করতে করতে স্বপ্নটা এখন আরও বিস্তৃত হয়েছে।’ কথার একেবারে শেষে বলেন, ‘শ্রোতাদের সঙ্গে নেমেসিস ব্যান্ডের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। যার ফলে গান করতে গিয়ে কোনো চাপ তৈরি হয় না। নিজেদের মাথায় যা-ই আসে তা-ই করি।’

জোহাদ আরও বলেন, ‘গান করার পাশাপাশি আমরা শেখার প্রতিও গুরুত্ব দিয়ে আসছি। না শিখলে ভালো গান করা কঠিন। সময় পেলেই সবাই একসঙ্গে বসি! জ্যামিং করি। এর মধ্যে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করে। শান্তি লাগে!’ বর্তমানে নেমেসিসের সদস্য পাঁচ। লাইনআপ হচ্ছে জোহাদ রেজা চৌধুরী (ভোকাল ও গিটার), রাফসান (গিটার), ইফাজ (গিটার), রাতুল (বেজ গিটার) ও জেফ্রি (ড্রামস)।