<

২৬ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৫ কোটি ডলার

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা চলছে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে (১-২৬ অক্টোবর) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৪ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ডলার, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১৩৩ কোটি ডলারের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি এবং মাস ভিত্তিতে এ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বছরে সর্বোচ্চ ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে জুন মাসে। সেটিই একক মাস হিসাবে গত তিন বছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে সবচেয়ে বেশি ৩৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ১৮ কোটি ৫৩ লাখ, সোনালী ব্যাংক ১৪ কোটি ৩৬ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংক ১২ কোটি ২৩ লাখ, জনতা ব্যাংক ১১ কোটি ৬৪ লাখ ও রূপালী ব্যাংক ১০ কোটি ১৯ লাখ ডলার এনেছে।

২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলার-সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। তাতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পায়। তখন থেকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় এনে ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে অবশ্য খুব কাজ হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা। এতে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকগুলো এখন ১২২ টাকায়ও প্রবাসী আয় কিনছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দিয়েও প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে। ফলে প্রবাসী আয় বাড়ছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে প্রবাসী আয় কেনার যে প্রতিযোগিতা ছিল, এখন তা অনেকটা কমে এসেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি কমায় ব্যাংকগুলোর সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটিও প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।

গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় প্রবাসী আয় কমে যায়। বৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে না পাঠানোর প্রচারণাও চলে তখন। তবে সরকার পরিবর্তন ও ডলারের দাম নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের পর প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় ফেরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার।