<

চালের দাম কিছুতেই কমছে না

অর্থনীতির সব তত্ত্ব ভুল প্রমাণ হচ্ছে চালের বাজারে। গত কয়েক মৌসুমে ধান আবাদে খুব বড় বিপদ হয়নি। এপ্রিলে বোরোর বাম্পার ফলন দেখেছে বাংলাদেশ। মাত্রই আউশ কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক। মাঝে তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড় আর কীটপতঙ্গের আক্রমণ হলেও চালের উৎপাদন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টন। তবে মার্কিন সংস্থা ইউএসডিএ’র গ্রেইন অ্যান্ড ফিড প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বন্যার ধাক্কায় আসছে আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন কমতে পারে আড়াই ভাগ। তার মানে বিপদ বড় নয়।

এদিকে, বর্তমানে দোকানে চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত। অনেক আড়তে তো বস্তা রাখার জায়গা হচ্ছে না। অথচ এমন ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। ৫৮ টাকা ছাড়িয়েছে গরীবের ভরসা মোটা চালের দর। মিনিকেটেও একই দশা। নাজিরশাইল কিনতে পারছেন গুটি কয়েক মানুষ।

বস্তায় দাম উল্লেখ থাকলেও তার তোয়াক্কাই করছেন না ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকার বদলালেও চালের সিন্ডিকেট ভাঙেনি। প্রশ্ন আছে, ধান উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়েও।

গত কয়েক বছরে চালের ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে একাধিক করপোরেট গ্রুপ। এসব ব্র্যান্ড কোম্পানির চালের দামও কিছুটা বেশি। মৌসুম এলেই ধান কিনতে বিপুল টাকা খরচ করে এসব কোম্পানি। ফলে ভেঙে গেছে আগের সাপ্লাই চেইন। বলা হচ্ছে, তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন আর দাম উঠা-নামা করাচ্ছেন। কিন্তু বাজারে তো তাদের বাইরেও বড় সংখ্যক চাল ব্যবসায়ী রয়েছে। তাহলে করপোরেটের পক্ষে এককভাবে কি তা সম্ভব? উল্টো অভিযোগ, বাড়তি লাভের আশায় কৃষক ধান বিক্রি করছেন না।

সাকী অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন বলেন, বন্যায় ত্রাণ ও চিড়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে মোটা ধান কেনা হয়েছে। এজন্য বাজারে মোটা ধান নেই বললে চলে। তাই বাজারে মোটা চালের দামটা একটু বাড়তে পারে।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, যে বাজারে চাল বিক্রি করে, সে একাই কিন্তু পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না। এটা এক-দুইজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এটা কোনো প্যাটেন্ট করা পণ্য না, চাল সবাই উৎপাদন করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চালের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য নিয়ে গড়মিল আছে। যার দায় পড়ছে ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ছোট-মাঝারি-বড় ব্যবসায়ী সবার মাঝে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করা। এখন সেই প্রতিযোগিতা নেই। দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবাই এখন সহযোগিতা করছে এবং মুনাফা লুটছে।

উল্লেখ্য, দেশে মোট উৎপাদিত চালের ৪০ ভাগই উৎপাদন হবে আসছে আমন মৌসুমে।