গণঅভ্যুত্থানে পতিত ও পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা জুলুম করেছেন, তাদের সকলের বিচার এই জাতি দেখতে চায়। আমরা কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
শুক্রবার সকালে গাজীপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী ময়দানে জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগরের উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান এসময় আরও বলেন, ‘তোমরা এখন কোথায়, কোন জঙ্গলে লুকিয়ে আছো? কোন গর্তে তোমাদের অবস্থান? এখন বিভিন্ন জায়গায় পালাচ্ছো কেনো? এটা না তোমাদের মার দেশ- না বাবার দেশ? তোমরা না দেশের মালিক ছিলা? তো মালিকগুলো কোথায় গেলা? আসো সাহস করে।’
তিনি বলেন, আমরা দাবি করি প্রত্যেকটা শহীদ পরিবারের থেকে কমপক্ষে একজনকে যাতে সম্মানজনক চাকরি দেয়া হয়। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে তাদেরকেও সম্মানজনক চাকরি দেয়া উচিত। জাতির দায়িত্ব এখন এই পরিবার ও ব্যক্তিদেরকে সম্মানিত করা। আমরা দল এবং ধর্মের ভেতর কোনো বিভাজন মানি না। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই।
মতবিনিময় সভাটি বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের সমাগমে বিশাল সমাবেশে পরিণত হয়। মহানগর জামাতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, ঢাকা অঞ্চল উত্তরাঞ্চল টিম সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, জেলা আমির ড. জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর নায়েবে আমির মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর সেক্রেটারি আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, প্রচার সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আইউবী, মমতা আফজাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শহীদদের কোন দলীয় ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। শহীদগণ জাতীয় সম্পদ। তাদেরকে ইজ্জতের চূড়ান্ত সিমায় রাখতে চাই, দেখতে চাই। এই শহীদ পরিবারগণের প্রতি রাষ্ট্রকে অবশ্যই নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। শহীদ পরিবারের লোকজন আমাদের অহংকারের পাত্র, সম্মানের পাত্র। সরকারের কাছে দাবি জানাবো শহীদদের যেন সঠিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে তোমরা যাদের ওপর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ করেছ, অত্যাচার নির্যাতন করেছ, তাদের একজনও এই দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। হাসিমুখে ফাঁসি বরণ করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। যারা অন্যায় অত্যাচার করেছে আল্লাহ তাদের খোলা আকাশের নিচে জায়গা দিয়েছেন। দেশ গঠনে আমরা জামায়াত ইসলামী জনতার সহযোগিতা চাই।
জামায়াতের আমির বলেন, দেশের স্বার্থে আমাদের কোনো বিভাজন নেই। যত বিভাজন তা আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি। আর কাউকে জাতিকে ভাগ করার সুযোগ দিবো না। জাতিকে তারাই ভাগ করে যারা দেশের দুশমন। দলের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে আর ভাগ করার সুযোগ দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন।
জাতির সাথে সেবক হয়ে গাদ্দারি করলে কি পরিণতি হয় তা থেকে শিক্ষা নিতে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, তাদের সেবক হয়ে মালিক বনে গেলে কি পরিণতি হয় তা থেকে আমি, আমরা এবং জাতিকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আর কোনো স্বৈরাচার সরকার আসবে না, যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণকে তাদের কেনা টাকায় বুলেট ছোড়ার দুঃসাহস করবে। এমন কোন নতুন সন্ত্রাসী সরকার দেখতে চাই না।
কোন দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা বিচারের আমানত রক্ষা করতে পারবে তাদের বিচারক হিসেবে চাই। যারা মুখের দিকে তাকিয়ে কোন বিচার করবে না। নীতি, নৈতিকতা ও সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দিবেন। বিচারবিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে, সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার হতে হবে সঠিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বীকৃতি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা দলীয় ভিত্তিতে শহীদদের বিভক্তি চাই না। তারা আমাদের মর্যাদার পাত্র। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেনো জানে তাদের মুগ্ধ, সাঈদ ও রিয়ারা ছিলো।
এসময় তিনি প্রত্যেক শহীদ পরিবারের সদস্যদের একজনকে সরকারি চাকরি দেয়ার দাবি করেন।
সভার শুরুতে জামায়াতের আমির শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন।