জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি এখন বৈষম্যের শিকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন। সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
জি এম কাদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলের পদ–পদবি উল্লেখ করে রংপুরে মামলা হয়েছে। আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছেন অনেকে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে আমি ৩ জুলাই সংসদে ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তৃতা করেছি। বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে দেওয়া বক্তৃতায় বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। আমি ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে আটকের পর আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি, আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়েছি।’
আক্ষেপ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছেন, সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করব।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের নামে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রংপুর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রংপুরের মানুষ রাস্তায় জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছে। আমার জন্যও তারা রাজপথে লড়াই শুরু করেছে।’
জাতীয় পার্টি কোনো অপরাধ করেনি জানিয়ে জি এম কাদের আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আমাদের চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চলছে। আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিষ্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি।’
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোসর বলা উচিত নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনব্যবস্থায় বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা চার বছর সংসদে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের পক্ষে কাজ করাই আমাদের রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য। সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছি আমি।’
প্রেসিডিয়াম সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মীর আবদুস সবুর, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ, এ টি ইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখত, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার প্রমুখ।