আদিবাসী, উপজাতি নাকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী; পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরও গেলো দেড় যুগেও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ের বিতর্কটাই শেষ হয়নি। ভূমির অধিকার প্রশ্নেও আছে বিতর্ক। বাঙালিদের প্রশ্ন যুগ যুগ ধরে বসবাস করলেও কেনো ভূমির অধিকার বঞ্চিত হবেন তারা।
গণঅভ্যুত্থানের পর জাতিগত সংঘাতে পুড়েছে পাহাড়ি বাঙালি দুই পক্ষের দোকানপাট বাড়িঘর। জীবিকায় পড়েছে টান। প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও সঙ্কটের অবসান হচ্ছে না।
২৭ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে হয় পার্বত্য শান্তি চুক্তি। এরপরও পাহাড়ে তৈরি হয় আরও কিছু সশস্ত্র সংগঠন। তাদের কারো দাবি স্বায়ত্তশাসন।
কেউ চান সেনা প্রত্যাহার। কারো চাওয়া স্বাধীন জুম্মল্যান্ড। কারো বা স্বাধীন কুকিল্যান্ড। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মূল অভিযোগ সন্ত্রাসীদের সব অস্ত্র জমা না হওয়ায় নিশ্চিত হয়নি পাহাড়ের নিরাপত্তা।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা। এরপর পার্বত্য উপদেষ্টা নিয়োগের বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ হয়।
যার নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বর্ণবৈষম্য বিরোধী বৈশ্বিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কারপ্রাপ্ত ও চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী ইয়েন ইয়েন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতারা।
১৮ সেপ্টেম্বর ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ৮ দফা দাবিতে খাগড়াছড়িতে পালিত হয় ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ কর্মসূচি।
খাগড়াছড়ির মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ১৯ সেপ্টেম্বর হামলা হয় সেখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর। এর জেরে ২০ সেপ্টেম্বর সংঘাত হয় রাঙামাটি শহরেও।
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে মারা যান পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর চারজন। এসব সংঘাত সংঘর্ষের বলি শুধু সাধারণ বাঙালি ও পাহাড়িরাই। যাদের অনেকে শান্তিচুক্তি সম্পর্কেও ঠিকমতো জানেন না।
এই অবস্থায় সংঘর্ষের হত্যার ঘটনায় দায়ীদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।
২০০৭ সালে জাতিসংঘের বিশেষ রেজোল্যুশনের মাধ্যমে ‘আদিবাসী’ হলে বিশেষ কিছু সুবিধা পাবার এক ঘোষণা দেয়া হয়। তাই শান্তি চুক্তিতে উপজাতি পরিচয়ে সই করলেও এরপর পাহাড়ের ৪৫টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আদিবাসী পরিচয়ের দাবি তীব্র হয়ে ওঠে।
এই অবস্থায় উভয়ের দাবি মাথায় রেখে প্রয়োজনে চুক্তিটি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।