শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
২০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাতের আঁধারে রাবির ৫ হলে কোরআন পুড়িয়েছে ‘দুর্বৃত্তরা’, তদন্তে প্রশাসনের কমিটি

রাতের আঁধারে রাবির ৫ হলে কোরআন পুড়িয়েছে ‘দুর্বৃত্তরা’, তদন্তে প্রশাসনের কমিটি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তেজনা, তদন্ত কমিটি গঠন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন হল, including সৈয়দ আমীর আলী হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মতিহার হল, মাদার বখ্শ হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া এসব হলের দেয়ালে বিভিন্ন উস্কানিমূলক চিহ্ন আঁকা হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) সকালে প্রথমে জিয়া হলে পোড়া কোরআন দেখতে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে জানায়। ধারণা করা হচ্ছে, শনিবার দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঘটনার বর্ণনায় সৈয়দ আমীর আলী হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, সকালে তিনি হলের মুক্তমঞ্চে পোড়া কোরআন শরীফ দেখতে পান। এরপর তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, এটি একটি ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানিমূলক ঘটনা এবং কোনো একটি পক্ষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থী আরও বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

এ বিষয়ে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হারুনর রশীদ বলেন, ‘‘কোনো ধর্মের এমন অবমাননা সহ্য করা হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, হল প্রশাসন এ ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করা হবে।

এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়। এর পর শিক্ষার্থীরা বিকেল পৌনে তিনটায় প্যারিস রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে, এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবসহ প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপর দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি।

এ সময় উপাচার্য জানান, এই ঘটনার তদন্তে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সাথেও একটি জরুরি সভা করেছেন।

কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এই হীন ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক এবং আন্তঃধর্ম সম্প্রীতি নষ্ট করার চক্রান্ত।’’

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এই ঘটনাকে পুঁজি করে যাতে কোনো সুযোগসন্ধানী চক্র সুবিধা গ্রহণ না করতে পারে, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।

-সাইমন ইসলাম

guest


0 মতামত সমুহ
Inline Feedbacks
View all comments