<

‘এবার একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না সরকার’, একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল

প্রায় ১ বছর ধরে দেশজুড়ে সমাবেশ, পদযাত্রা, গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে এখন যুগপৎ আন্দোলনে আছে আরও কয়েকটি দল ও জোট। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্ব বা রাজনীতির গন্তব্য আসলে কোনদিকে; সে প্রসঙ্গে যমুনা টিভিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবার ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না আওয়ামী লীগ। জনগণ যেমন প্রতিরোধ করবে, তেমনি অবাধ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপও আছে। তার মতে, এ দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে এক দফা দাবি জানিয়েছি জনগণের সমর্থন নিয়ে, সেটা সরকারের পদত্যাগ। এ বিষয়ে এখনও আমরা সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি না। উল্টো, তারা এই দাবিকে বাতিল করতে চাইছে। তারা বলছে, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন করতে হবে। এখন, সংবিধান তো তারা করেছে। সুতরাং, ওই সংবিধানকে জনগণের সংবিধান বলার জায়গাগুলো তো নেই। সেদিক থেকে রাজনীতি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে- এমন কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। সেক্ষেত্রে, ২০১৪ ও ২০১৮ থেকে এবারের পরিস্থিতি কীভাবে ভিন্ন হতে পারে; সে প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবার কেবল বিএনপি নয় বা জোট নয়। এবার আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব বেশ পরিষ্কার করেই বলছে, আগের দু’টি নির্বাচন ঠিক হয়নি। এবার নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার। আর, সেটাই আমাদের দাবি।

বলা হচ্ছে, চাপে আছে বর্তমান সরকার। সেই চাপের স্বরূপ বা সত্যতা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে পুলিশ যখন মারমুখী ছিল, একেবারে দাঁড়াতেই দিতো না, এখন কিন্তু সেই অবস্থা নেই। এটা ছিল এক নম্বর পয়েন্ট। দুই হচ্ছে, সরকার এখন কথায় অন্তত বলছে যে, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। তার মানে, অতীতে করেনি। এখন করবে। এইসব কথা মনে হচ্ছে, তারা কিছুটা চাপের মধ্যে তো আছেই।

সরকার এবার একতরফা নির্বাচন করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি বিশ্বাস করি না এবার তারা একতরফা নির্বাচন করতে পারবে। কারণ, মানুষ এবার প্রতিরোধ গড়বে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন যদি সব দলের অংশগ্রহণে হয়, তাহলে দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট বড় ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসবে। আর এসবের দায় বর্তাবে বর্তমান সরকারের ওপর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবিশ্বাস্যভাবে দুর্নীতি হয়েছে যেটা অতীতের বাংলাদেশ কেন, পাকিস্তান আমলেও কেউ দেখেনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নয়, নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তিনি বলেন, এই দু’টি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সরকারপ্রধানের পদত্যাগ মানেই সরকারের পদত্যাগ। সেইখানে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের জন্য কেবল প্রধানমন্ত্রী গেলেই হবে না; সরকারকেও যেতে হবে। কারণ, একইভাবে সাজানো তো সব।

বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণ অংশগ্রহণ করে এবং সেটা ভালোই হয়। অশান্তি দিয়ে তো কোনোকিছুই অর্জিত হতে পারে না।