পটুয়াখালীর বাউফলে ঘসেটি বেগমের নির্মাণ করা মসজিদ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইতিহাসের এই স্থাপনাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলা, বিহার এবং ওড়িষ্যার নবাব আলীবর্দী খানের বড় মেয়ে নবাবজাদী মেহের-উন-নিসা। যিনি ঘসেটি বেগম নামেই পরিচিত।
বাউফল উপজেলা পরিষদের তথ্য মতে, প্রায় সাড়ে ৩’শ বছর পূর্বে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে ঘসেটি বেগম এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে ইতিহাসের কোথাও এই মসজিদ সম্পর্কে তথ্য নেই। সংরক্ষণের অভাবে প্রাচীন এই মসজিদটি আজ ধ্বংসের পথে।
স্থানীয়দের মাঝে কথিত আছে, মধ্যযুগের শেষ দিকে এই অঞ্চলে জমিদারি বিস্তৃত ছিল। এই অঞ্চল সেসময় প্রাচ্যের রাজধানী ছিলো। রাজধানীর নাম ছিলো চন্দ্রদ্বীপ। আর একদম এই তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী অঞ্চল তৎকালীন কচুয়া নামক এলাকা ছিল এ জমিদারির প্রধান কেন্দ্র। তখনকার কোন একটা সময় এখানে ঘুরতে এসে হয়তো মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন ঘসেটি বেগম।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঘসেটি বেগম বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সম্পর্কে খালা ছিলেন। নবাবকে সরিয়ে যারা অর্থ ও ক্ষমতা লাভের জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হলে তা মেনে নিতে পারেননি ঘসেটি বেগম।
২৩শে জুন, ১৭৫৭ সাল। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তাতেই ভারতে ইংরেজদের একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়। নবাবের পরাজয়ের ইতিহাসে মীর জাফর এতটাই বিশ্বাসঘাতক ছিল যে এখনও কেউ অবিশ্বাসী হলে বা বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাকে ‘মীরজাফর’ সম্বোধন করা হয়। নবাবের বিপক্ষে রাজসভার যে ব্যক্তিরা ছিল তার মধ্যে মীরজাফর অন্যতম।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে তার সাথে নবাবের খালা ঘসেটি বেগমও যুক্ত হন। পরাজয়ের কিছুদিনের মধ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেন মীরজাফরের ছেলে মিরান। পলাশী যুদ্ধ পরবর্তীতে ঘসেটি বেগম নিজেও শিকার হয়েছিলেন ষড়যন্ত্রের। এই ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ বুড়িগঙ্গায় ডুবে করুণ মৃত্যু হয় তার।
পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বাংলার মানুষের কাছে ঘসেটি বেগম বরাবর ঘৃণিত এবং জটিল মানসিকতার প্রতীকের এক চরিত্র।