দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে যৌথবাহিনীর অভিযান আতঙ্কের নগরী ঢাকাবাসীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। তবে এখনও পুরোপুরি আতঙ্ক কাটেনি নাগরিকদের। এরইমধ্যে ১০০ দিনে পেরিয়ে গেলেও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনা বাড়ছে।
ঢাকার একজন বাসিন্দা বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের যে ভয় ছিল তা উঠে গেছে। আরেকজন বলেন, সেনাবাহিনীকে দেখলে অপরাধীরা ভয় পায়।
সরকারি হিসাব মতে, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সারাদেশে ৫২২টি খুনের মামলা হয়েছে। এই সময়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় পর্যায়ক্রমে ৭৭৪ ও ১৮০০টি মামলা দায়ের হয়েছে। তাছাড়া, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫২৯টি, ডাকাতির ঘটনায় ১১১টি, দস্যুতার ঘটনায় ২৩১টি মামলা হয়েছে।
এদিকে, আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। আর রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৩৫ ও গণপিটুনিতে ৬৮ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক আছে বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এই প্রসঙ্গে পুলিশের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর বলেন, কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত ইউনিটগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
র্যাবের মুখপাত্র লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, এলাকাভিত্তিক কী ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা শনাক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে পরিসংখ্যান আর কর্মকর্তারাই যাই বলুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তব অবস্থা বেশ নাজুক বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। এর কিছু বাস্তবতাও আছে বলে মনে করেন তারা।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ছিল। ফলে জনগণের সাথে পুলিশের দূরত্ব ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। পুলিশকে যদি সেনাবাহিনীর পাহারা দিয়ে রাখতে হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হবে?
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, অপরাধীদের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি সোর্সগুলোকে সচল করতে হবে। তাছাড়া, আইনি বিষয়গুলোকে জোড়ালো করার বিষয়ে ভাবতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যেটুকু সময় লাগছে সেই সময়টিকেই অপরাধীরা অপরকর্মের সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।