সাবেক আইনমন্ত্রী ও তার বান্ধবীর সম্পদের খোঁজে দুদক

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরুর কথা জানিয়েছেন কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।

সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়, আনিসুল হক ও তৌফিকা করিম দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়ের বাইরে ‘কোটি কোটি টাকার সম্পদ’ অর্জন করেছেন। সেখানে বলা হয়, আনিসুল হক মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘প্রচুর পরিমাণ অবৈধ সম্পদ’ অর্জন করেছেন।

সাবেক আইনমন্ত্রীর নামে কসবা, ত্রিশাল এবং পূর্বাচলে ৬ দশমিক ৮০ একর জমি; সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের ৪০ দশমিক ১০ কোটি টাকার শেয়ার; সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং অন্যান্য বিনিয়োগ মিলিয়ে ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং চারটি গাড়ি ও একটি মটরসাইকেল থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুদক বলছে, তৌফিকা করিম নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে ‘অঢেল সম্পদ’ গড়েছেন। তিনি সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সুযোগে তার মাধ্যমে আনিসুল হক কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা ‘পাচার করতেন’। নিম্ন আদালতের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ‘ঘুষ নিতেন’ তৌফিকা।

এ বিষয়ে দুদকের নথিতে বলা হয়, “আনিসুলের সকল দুর্নীতির সাথে তৌফিকা করিমের সংশ্লিষ্টতা ছিল মর্মে গোপনীয় তথ্যানুসন্ধানকালে সোর্স মূলে জানা যায়। আনিসুল-তৌফিকা তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামে-বেনামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সঠিক পরিলক্ষিত হয়।”

সরকারপতনের আট দিনের মাথায় গত ১৩ অগাস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। এরপর তাকে কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ, তার স্ত্রী সোহানা তাহমিনা, মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসউজ্জামান আনিস, মীরকাদিম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম শাহিন, মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া আফসুর বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়, মহিউদ্দিন আহম্মেদ চারটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক এবং তার স্ত্রী সোহানা তাহমিনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, জমিদখল ও অন্যান্যভাবে অবৈধভাবে’ অর্থ উপার্জন করেন। তার ‘অবৈধ সম্পদের’ মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে ফ্ল্যাট, যার দাম ৭৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ টাকার একটি ল্যান্ড ক্রুজার টয়োটা গাড়ি।

আনিসুজ্জামানের নামে ‘মুন্সিগঞ্জ টাওয়ার’ নামে ৫ তলা ভবনসহ মুন্সিগঞ্জের কোর্টগাঁও মৌজায় দুই তলা ভবন পেয়েছে দুদক। তার ২০২৩-২৪ সালের আয়কর নথিতে নিট সম্পদের দাম দেখানো হয়েছে ৯৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫২ টাকা।

শহিদুল ইসলাম শাহিন মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুন্নী এলাকায় ৫ তলা ভবনের মালিক। আফসার উদ্দিন ভূইয়ার বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণে সোয়া চার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য পেয়েছে দুদক।