আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে, গণহত্যা ও নির্যাতনে যারা দায়ী তাদের বিচার হওয়ার পর, জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মার্কিন সাময়িকী টাইম’কে এ কথা বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) টাইমের প্রতিবেদনটি তাদের অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য যে কারো মতো তারাও স্বাধীন। আমরা তাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মোকাবিলা করবো।
টাইমের প্রতিবেদনে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন; ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন; সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্দেশ্যে কমিশন গঠন; মানবাধিকার; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বাদে সত্যিকার জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব না–ও হতে পারে। অন্তত একটা সময় দলটির বিপুল জনসমর্থন ছিল।
এছাড়া এতে বলা হয়, ঢাকায় যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ বড় করে তুলে ধরতেন, তারা এখন দলটির সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে আনছেন। ভয় পাচ্ছেন যে, এই সম্পর্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাদের ওপর চড়াও হতে পারেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, শেখ হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং অন্তত ২৫ জনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সহিংসতার মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সাক্ষাতে দুই নেতার মধ্যে আন্তরিকতার প্রসঙ্গ টেনে টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর যে বিচ্ছিন্ন হামলা হয়েছিল, তা আরও বড় করে দেখাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে কট্টর ইসলামপন্থীরা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে প্রমাণ করতে চাচ্ছে দলটি।
ট্রাম্পের পোস্ট
৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশটিতে দলবদ্ধভাবে তাদের ওপর হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
এ বিষয়ে টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রভাবশালী মার্কিনিরা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে ট্রাম্পের কাছে তদবির করছেন বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া ডেমোক্র্যাট নেতা হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বন্ধুত্ব রয়েছে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন হিলারি। তারপর ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের জয় আমাদের এতটা আঘাত দিয়েছে যে আজ সকালে আমার কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছিল। আমি সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
তবে ড. ইউনূস আত্মবিশ্বাসী যে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরও ট্রাম্পের সঙ্গে একটি অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে পারবেন। ড. ইউনূসের ভাষায়, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী; আমরা ব্যবসার মধ্যে রয়েছি। কোনো সংকট থেকে বের হতে সহায়তার জন্য আমরা অর্থ চাচ্ছি না। আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই।’