<

শেখ হাসিনা কি আসলেই ভারত ছেড়েছেন?

ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচই আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি নিরাপদ আশ্রয়ে বসবাস করছিলেন। এরমধ্যে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায় বেশ কিছুদিন আগেই।

গত কয়েক দিন ধরেই জোর গুঞ্জন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এখন আর ভারতে নেই। তবে, এনিয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য নেই। শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি দিল্লি। জানা গেছে, ভারত ছেড়ে শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছেন।

১৫ বছরের শাসনামল ফেলে মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিশে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এতদিন ভারতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়ায় ভারতে থাকার বিষয়টি নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়।

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভারত ছেড়েছেন বলে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। যদিও নিশ্চিতভাবে কোন সূত্রই বিস্তারিত জানায়নি যে, তিনি কখন কিভাবে ভারত ছেড়েছেন। তবে তিনি আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমন ধারণার পেছনে কারণ আছে। সম্প্রতি আরব আমিরাতে দেখা গেছে সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে, যিনি পাঁচ আগস্টের পর ছদ্মবেশে সীমান্ত পারি দিয়েছেন বলে শোনা গিয়েছিলো। তাই মনে করা হচ্ছে, আরব আমিরাতের আজমান শহরে শামীম ওসমানের বাড়িতে শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসা খবর থেকে জানা যায়, আরব আমিরাতের আজমানে শামীম ওসমানের নিজের একটি বাড়ি আছে। সম্প্রতি তাকে সেখানেই দেখা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তিনি এ বিষয়ে সহযোগিতা করছেন বলে জানায় সূত্রগুলো। ওসমান পরিবারের সঙ্গে হাসিনার সখ্যতা রয়েছে।

এর আগে ‘খেলা হবে’ খ্যাত শামীম ওসমানকে দিল্লিতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ায় দেখা যায়। সেই ছবিও গণমাধ্যমে আসে। এর কিছুদিন পর দুবাইয়ের একটি শপিংমলে দেখা মেলে শামীম ওসমানের। সেখানে থেকে ধারণা পাওয়া যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতেই অবস্থান করছেন শামীম ওসমান।


এর আগে, একাধিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে জানতে চেয়েছে, শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ব্যবস্থায় দিল্লিতে অবস্থান করছেন? জবাবে ভারত বলেছে, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশে তিনি চলে যাবেন। তবে এনিয়ে ওয়াশিংটন বা দিল্লি প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেনি।

শেখ হাসিনা আসলেই আমিরাতে অবস্থান করছেন কিনা, সেটি নিয়ে সংশয় জানিয়েছে কিছু সূত্র। কারণ, এর আগে আমিরাতে হাসিনা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে দেশটি রাজি হয়নি। ব্রিটেন, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশোর মতো আরব আমিরাতও শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে মানা করে দেয়।

কোন প্রেক্ষাপটে এবং কি শর্তে শেষমেশ আমিরাত শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ের অনুমতি দিয়েছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। আরব আমিরাতের আজমাইনে শেখ হাসিনা ঠিক কতদিন অবস্থান করবেন এবং তার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় সে বিষয়েও কোন তথ্য জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে ভারতের মোদী সরকারকে দেশের ভেতরে-বাইরে যথেষ্ট চাপের মুখে পরতে হয়েছে। এই নিয়ে মোদী সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়।

উল্লেখ্য, গেল ৫ আগষ্ট বাংলাদেশে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দেশটিতে শুধু তিনি নন, রয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও শেখ হাসিনা সরকারের সময়কার অনেক কর্মকর্তাও।

জুলাই-আগষ্ট আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর গত ১৫ বছরের শাসনামলের দুর্নীতি, অনিয়ম, দুঃশাসন আর অসংখ্য বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যাকান্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের দাবীতে এখনো ছাত্র-জনতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সোচ্চার ও সক্রিয় রয়েছে।