অতিরিক্ত কাজ করতে না চাওয়ায় ভারতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বরখাস্ত

অতিরিক্ত কাজ করতে রাজি না হওয়ায় ভারতে এক প্রতিবন্ধী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেই ব্যক্তিকে। রাজি না হওয়ায় তাঁকে বারখাস্ত করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধী সেই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। রেডিটের জনপ্রিয় অ্যান্টিওয়ার্ক সাবরেডিটে পোস্টট করেছেন। এরপরই বিভিন্ন সংস্থায় কাজের পরিবেশ ও ভারতে বর্তমান চাকরির বাজার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের

এই গত মাসেই ভারতের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণী বহুজাতিক কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পর চার মাসের মধ্যে আত্মহত্যা করেন। তরুণীর মা–বাবার অভিযোগ, মেয়ে কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন। এরপর অতিরিক্ত কাজ করতে না চাওয়ায় এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল।

আন্না সেবাস্টিয়ান পেরাইল নামের সেই তরুণী দৈনিক ১৪ ঘণ্টা কাজ করতেন। তাঁর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না। সপ্তাহে সাত দিনই তাঁকে কাজে যেতে হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই প্রতিবন্ধী কর্মীর দাবি, তিনি মধ্যম সারির বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতেন। তাঁর কার্যালয়ের কর্তা অতিরিক্ত কাজ করার জন্য অনেক দিন ধরেই চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য কর্মীর তুলনা করতেন। যাঁদের সঙ্গে তুলনা তাঁর করা হতো, তাঁরা প্রায় তিন গুণ বেশি বেতন পেতেন বলে দাবি করেছেন ওই কর্মী। ওই কর্মী জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁকে সপ্তাহে অতিরিক্ত ২০ ঘণ্টা কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। এরপর তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যুক্তি দেওয়া হয়, তিনি সেই কোম্পানির জন্য ‘মানানসই’ নন।

প্রতিবন্ধী সেই কর্মী লিখেছেন, তিনি এখন আর বিচলিত বোধ করছেন না, বরং তাঁর মনে হচ্ছে, কাঁধ থেকে বড় বোঝা নেমে গেছে। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি খুব একটা দুঃখ পাননি, কেননা সেই কার্যালয়ের সহকর্মীরা তাঁর ‘পরিবার’ হয়ে উঠতে পারেননি।

সেই ব্যক্তির পোস্ট নিয়ে ইতিমধ্যে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় উঠেছে। নেট নাগরিকদের একজন লিখেছেন, প্রযুক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ খারাপ। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘খারাপ লাগছে যে সেই ব্যক্তি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি, তিনি শিগগির চাকরি ও প্রাপ্য সম্মান পাবেন।’

সম্প্রতি ভারতের এই অতিরিক্ত শ্রমের সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনি লিখেছেন, জাপানি সমাজের মতো ভারতীয় সমাজও অনুক্রমিক বা হায়ারার্কিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে কর্তৃপক্ষের প্রতি কর্মীর শ্রদ্ধাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সেই ঐতিহ্য মানতে গিয়ে এখানকার কর্মীরা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক আদেশ ও দাবির বিরোধিতা করতে পারেন না।

এই সাংস্কৃতিক কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে ভারতে অতিরিক্ত কাজ করানোর প্রবণতা মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন শশী থারুর। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে, উন্মুক্ত যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে ও সহায়ক কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে।