<

এক দফা দাবিতে আগামীকাল কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে যাবেন সাদপন্থীরা

আবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে। এরইমধ্যে সাদপন্থীরা শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান নেয়ার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

সাদপন্থীরা আসলে কী করতে চায় আগামীকাল, এ নিয়ে কথা হয় ওই পক্ষের সাথীদের সঙ্গে। জানা গেছে, মতাদর্শগত মিল না হওয়ায় যখন তাবলিগ জামাত প্রকাশ্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই পক্ষকে আলাদা আলাদাভাবে কাকরাইলের মারকাজে থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তখন বলা হয়েছিল, জুবায়েরপন্থীরা থাকবে একমাস; বিপরীতে সাদপন্থীরা অবস্থান করবে ১৪ দিন।

সাদপন্থীদের ভাষ্য, সমঝোতা ও ঝামেলা এড়াতে বৈষম্য হলেও তারা সেই প্রস্তাব মেনে মসজিদে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে জুবায়েরপন্থীরা সারা বছরই মসজিদে অবস্থান শুরু করে। সাদপন্থীদের জন্য নির্ধারিত ১৪ দিনের সময় তাদের ছেড়ে দেয়া হতো মসজিদের একটি কর্নার। অনেক চেষ্টা চালিয়েও ১৪ দিনের পুরোটা সময় তাদের সাথীরা মসজিদজুড়ে থাকতে পারেনি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সাদপন্থী গ্রুপের সাথী এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা তৌহিদুল হক সোহেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাকরাইলের এ মসজিদ নিজামুদ্দিন মারকাজের (দিল্লিতে অবস্থিত তাবলিগের কেন্দ্রস্থল) অধীনে। কিন্তু জুবায়েরপন্থীরা সেটা যেহেতু মানছেন না, তাই এ মসজিদে তাদের থাকার অধিকার নেই।

সোহেল আরও বলেন, নানা সময়ে প্রতিপক্ষরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের কাছে ছুরি-চাকুর মতো অস্ত্র রাখার প্রমাণও আছে। বর্তমানে এক দফা দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বাংলাদেশে আসতে এবং ইজতেমায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এ দাবি যেকোনোভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

সোহেল আরও বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি হতে পারে, তা অনেকে ধারনা করছেন। কিন্তু দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আমাদের হাজার হাজার সাথী দোয়া করছেন, যেন আল্লাহ তাদের (জুবায়েরপন্থী) অন্তরে বুঝ দান করেন। কোনো ঝামেলা যেন না হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ঢাকার কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের সুযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে জুবায়েরপন্থীরা। এক সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, সাদপন্থীরা হাদিসের অপব্যখ্যাকারী। তাদের দাওয়াত ও তাবলিগে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই।

পরের দিন (১৩ নভেম্বর) পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীরা জানান, কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থীরা সারা বছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থী আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থীরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কা করছেন তারা।

সাদপন্থীরা আরও জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারাদেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।

এছাড়া, কাকরাইল মার্কাজ (তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) সম্পূর্ণভাবে নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দেয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাতে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কাকরাইল মসজিদ ও তাবলিগ বিষয়ে জরুরি বিবৃতি’তে জানানো হয়, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যৌথভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাবলিগের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ফলে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের বিষয়ে পূর্বের নিয়ম মেনে নিয়ে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ ও কাকরাইলের পক্ষ থেকে সবাই একমত পোষণ করেন।