মাকাল ফল দেখেছেন নিশ্চয়। বাইরে টসটসে লাল কিন্তু ভেতরটা কালো। খারাপ কিছুর উদাহরণ টানতে এই ফলের নাম ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু জোসে মরিনিও নাকি ঠিক এর উল্টো। মাঠের আচরণে তাঁকে বজমেজাজি মনে হলেও ড্রেসিংরুমে তিনি একদম হাসিখুশি, নরম স্বভাবের মানুষ। এমনটাই দাবি করেছেন আর্জেন্টিনার সাবেক স্ট্রাইকার ও মরিনিওর একসময়ের শিষ্য দিয়েগো মিলিতো।
ডাগআউটে উদ্ভট সব কাণ্ড করে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন মরিনিও। কোনো সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য মনে হলে রেফারির সঙ্গে লেগে পড়তেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখার বিব্রতকর রেকর্ডটা মরিনিওরই।
এই তো সম্প্রতি তুর্কি সুপার লিগে ত্রাবজোনস্পোরের বিপক্ষে তাঁর দল ফেনেরবাচের জয়ের রাতে ম্যাচ অফিশিয়ালদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছেন। সঙ্গে জরিমানা গুনেছেন ২০ হাজার পাউন্ডের (৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা) মতো।
কিন্তু মিলিতাও মনে করেন, মরিনিও দলের স্বার্থেই প্রতিনিয়ত নিজের ভাবমূর্তি বিসর্জন দিয়ে থাকেন। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসে সাবেক কোচকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাইরে তাঁর আচরণ এক রকম কিন্তু ভেতরে (ড্রেসিংরুমে) তিনি একেবারেই আলাদা মানুষ। দলকে রক্ষা করতেই মাঠে তিনি বদমাশ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং খেলোয়াড়দের ওপর থেকে চাপ কমান। কিন্তু ভেতরে তিনি খুব মজার মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে, তিনি আমার কাছে সত্যিই এক অসাধারণ ব্যক্তি।’
৬১ বছর বয়সী মরিনিও রিয়াল মাদ্রিদ, ইন্টার মিলান, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম, এএস রোমা, বেনফিকা, এফসি পোর্তোর মতো ক্লাবগুলোতে কোচিং করিয়েছেন। নিজেকে ‘স্পেশাল ওয়ান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।
তবে প্রধান কোচের ভূমিকায় সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন ইন্টার মিলানে থাকতে। ২০১০ সালে ইতালিয়ান ক্লাবটি তাঁর অধীনেই ট্রেবল (চ্যাম্পিয়নস লিগ, সিরি ‘আ’, কোপা ইতালিয়া) জেতে। সে বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মিলিতোর জোড়া গোলেই বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতে ইন্টার।
শুধু ২০০৯-১০ মৌসুমেই মরিনিওকে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন মিলিতো। এরপর মরিনিও রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হলেও মিলিতো ইতালির অন্যতম সফল ক্লাবটিতে খেলেছেন আরও চার বছর।
সাবেক কোচের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি ইন্টার মিলানে কাটানো দিনগুলোতে ফিরে গেছেন, ‘যখন আমি ইন্টারে যোগ দিলাম, তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে স্বাগত জানালেন। আমি তাঁকে বললাম, আমি ২২ নম্বর জার্সি চাই। আমি জানতাম, সেই সময় ২২ নম্বর জার্সিটা পাওলো ওরলানদোনির ছিল। তাই পরে বললাম, জার্সির নম্বর আমার জন্য কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু জোসে (মরিনিও) আমাকে শান্ত থাকতে বললেন।’
ইন্টার মিলানে ২২ নম্বর জার্সিটা শেষ পর্যন্ত কীভাবে তাঁর হয়ে গেল, সেই গল্পও শুনিয়েছেন মিলিতো, ‘ট্রেনিং সেশনে পাওলোর (ওরলানদোনি) সঙ্গে আমার দেখা হলো। সে বলল, “মৌ (মরিনিওর ডাকনাম) আমাকে তোমার ব্যাপারে বলেছে। আমি তোমার একটা উপকার করতে চাই। তোমাকে হ্যাঁ বলতে হবে। ২২ নম্বর জার্সিটা এখন খালি আছে।” শেষ পর্যন্ত সেটা আমার হয়ে গেল।’
এ মুহূর্তে তুর্কি সুপার লিগ পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে আছে মরিনিওর ফেনেরবাচে। আগামীকাল রাশিয়ান ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ইস্তাম্বুলের ক্লাবটি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে কালকের ম্যাচে মরিনিওকে দেখা যাবে না। আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে ২৩ নভেম্বর কাইসেরিস্পোরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ডাগআউটে ফেরার কথা তাঁর।