<

সড়কে প্রায় প্রতিদিনই অবরোধ, বিরক্ত নগরবাসী 

রাজধানীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে মানুষের ভোগান্তি তৈরি করা ছাড়া যেন দাবি আদায়ের বিকল্প কোনো পথ নেই। প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামছে কোনো না কোনো পক্ষ। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেয়া একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। কিন্তু সেটির জন্য সড়ক আটকে তাৎক্ষণিক দাবি আদায়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। 

দুর্ভোগ আর ভোগান্তির এই শহরে; সড়ক অবরোধের যন্ত্রণা আর মানতে চান না সাধারণ মানুষ। তাদের কথা, বৃহত্তর কোন স্বার্থে আন্দোলন-মিছিল-সভা সমাবেশ ঠিক আছে, কিন্তু প্রতিদিনই যেভাবে দাবি আদায় সড়ক দখল করা হচ্ছে, তাতে যানজট তৈরি হচ্ছে, মানুষের চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে। সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে পরিহবন যাত্রীদের একটাই জিজ্ঞাসা, তাদের কি দোষ, কেন রোজ রোজ এমন ভোগান্তি।  

রাজধানীর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সম্প্রতি মহাখালী সড়ক অবরোধ করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। রাজধানীর অন্যতম প্রধান এই সড়কটি আটকে দেয়ার তৈরি হয় তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন হাজারও মানুষ। পরে মানুষের প্রতিবাদের মুখে সড়ক ছাড়তে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা। 

সোমবার হঠাৎ করেই ধানমন্ডির সড়ক অবরোধ করে বসে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানেও ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ। আবার স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে মঙ্গলবার সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দিনভর তাদের অবরোধের কারণে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব নীলক্ষেত আর আজিমপুর এলাকায় চলাচল করা সাধারণ মানুষ। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র যানজট। 

বুধবারও দিনের শুরুতে মহা ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এর অন্যতম কারণ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর সড়ক অবরোধ। বিশেষ নিউমার্কেট, মিরপুর, শাহবাগ, ধানমন্ডি এলাকার এর প্রভাব পড়েছে। এদিকে এই অবরোধের কারণে পুরো ঢাকা শহরে যান চলাচল বিঘ্ন ঘটেছে। ৭ কলেজের ব্যানারে সামান্য কিছু শিক্ষার্থীর অবরোধের কারণে সায়েন্সল্যাব মোড়সহ ওই এলাকার আশপাশের সড়কে বন্ধ হয় যায় যান চলাচল। 

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষজন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের চরম অবস্থা। যেসব কমলমতি শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছে তারা বাসায় ফিরতে পারছে না। অন্যদিকে এই এলাকাটিতে রয়েছে প্রচুর হাসপাতাল। যার ফলে রোগী ও তাদের স্বজনরা মহাদুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে ঠিকমতো হাসপাতালে পৌঁছাতেও পারেননি। চিকিৎসকরাও আটকা পড়েছে। ফলে অনেক রোগীদের অপেক্ষা বাড়ছে।

চার-পাঁচ ঘণ্টার অবরোধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কোন শেষ ছিলো না। কেউ গাড়িতে ঘুমিয়েছেন কেউ বা পায়ে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছেছেন। অনেক অসুস্থ রোগীকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। মানুষ বলছেন প্রতিদিনই কোন না কোন পক্ষের সড়ক অবরোধের ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যারা আন্দোলন করছেন তাদের এবং সরকারের দুই পক্ষেরই বিষয়টির দিকে নজর দেয়া উচিত। 

তবে, যারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তাদের দাবি এই দুর্ভোগের দায় সরকারের তাদের নয়। তারা নিয়ম মেনেই তাদের দাবির কথা জানালেও তাতে কর্ণপাত করে না সরকার। সড়ক অবরোধ করলে টনক নড়ে, তখন দাবি সম্পর্কে কথা বলে সরকার। ফলে সরকারের টনক নড়াতেই সড়কে নেমে আসা ছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প থাকে না।

আর সাধারণ মানুষ বলছেন, ভোগান্তির এই শহরে এমনিতেই মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। তারপরও প্রতিদিনই একই রাজপথ বন্ধ করে দাবি আদায়ের এমন কর্মসূচি নিয়ে সব পক্ষেরই নতুন করে ভাবা উচিত।