আমন ধানের দাম মণপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার দাবিতে ঠাকুরগাঁও শহরে সমাবেশ হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে শহরের চৌরাস্তায় বাংলাদেশ কৃষক সমিতি ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের আগে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের সাধারণ পাঠাগারের সামনে জড়ো হন সাধারণ কৃষক ও কৃষক সমিতির নেতারা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে অবস্থান নেয়। সেখানে সংগঠনের নেতারা জাতীয় ও স্থানীয় কৃষকদের ১২ দফা দাবি–সংবলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে দেন।
পরে মিছিল নিয়ে শহরের চৌরাস্তায় যাওয়ার পর সেখানে পথসভা হয়। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলীর সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন, সহসাধারণ সম্পাদক সুকান্ত সফি চৌধুরী, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোর্তুজা আলম। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম।
পথসভায় মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান বনিয়াদ কৃষি। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ভিত্তি কৃষির ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। দেশে আমন ধান কিছুদিনের মধ্যেই কাটা শুরু হবে। প্রতিবছর ধানের দাম সরকার নির্ধারণ করলেও ধানসহ পাট, গমের লাভজনক দাম কৃষক পাচ্ছেন না। সম্প্রতি দফায় দফায় সার, জ্বালানি তেল ও কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে; কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে ফসলের দাম পাচ্ছেন না। গত মৌসুমে সরকার আমন ধানের দাম মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে; কিন্তু উৎপাদন খরচের তুলনায় এটা যথেষ্ট নয়। উৎপাদন খরচ বিবেচনা করে ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারি গুদামে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা খুবই কম। সরকার প্রতিবছর ধান, মোটা চাল ও আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে; কিন্তু তার সুফল কৃষকেরা পান না। বাধ্য হয়ে কৃষক বাজারে সরকার–নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে ধান বিক্রি করেন। এতে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষক ধান উৎপাদন করেন, চাল নয়। ধান থেকে চাল তৈরি করেন চালকল ও মিলের মালিকেরা। অথচ সরকার ধান কেনে কম, চাল কেনে বেশি। এর মাধ্যমে কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে।
বক্তারা আরও বলেন, কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে একটি করে ক্রয়কেন্দ্র খুলতে হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যাতে চালসহ দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে খাদ্যপণ্যের মজুত নিশ্চিতে প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন ধান কেনা প্রয়োজন। খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ও সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।