<

জাপানের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার পূর্বাভাস

জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর গভীর নজর রাখছেন অনেকেই। কারণ, এই নির্বাচনে শুধু প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর ভাগ্যই নয়, ক্ষমতাসীন জোট ক্ষমতায় থাকতে পারবে কি না, তার আভাস পাওয়া যাবে।

প্রথম সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব না হলেও ক্ষমতাসীন জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা নিজের অবস্থান শক্তিশালী করে নেওয়ার বাসনা থেকে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। তবে এই নির্বাচন তাঁর জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

গত মাসে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হন ইশিবা। এরপর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

দলীয় প্রধান হওয়ার পর এলডিপির আর্থিক কেলেঙ্কারি সামাল দিতে পদক্ষেপ নেন ইশিবা। এই পদক্ষেপ ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে তাঁর কিছু অসংযত মন্তব্যও অনেকের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নাগরিকদের সমর্থনের হার দ্রুত হ্রাস পাওয়া লক্ষ করা গেছে।

এমন অবস্থায় আজকের ভোটের ফলাফলের মধ্য দিয়ে ইশিবা নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ফলে এ রকম সম্ভাবনা ক্রমে বাড়ছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই হতে পারেন সবচেয়ে কম সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হিগাশিকুনি নারুহিরো মাত্র ৫৪ দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অপর দিকে ইশিবা দায়িত্ব গ্রহণের ২৬ দিন পর আজকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফলের আলোকে তাঁকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হলে হিগাশিকুনির আগের রেকর্ড তিনি হয়তো ভেঙে দেবেন।

ইশিবাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলেও এলডিপির পতনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, আসনসংখ্যা হ্রাস পেলেও দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, বিরোধী শিবিরের দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব।

প্রধান বিরোধী সাংবিধানিক গণতন্ত্রী (সিডিপি) দল গত নির্বাচনের মতো জাপানের কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। ফলে অন্য দলগুলো অনেক আসনে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করানোয় এদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে উদার গণতন্ত্রীরা এতে লাভবান হবে।

জাপানের স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ রাত আটটা পর্যন্ত চলে। নির্বাচনে ২ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার ভোটার ভোট দিয়েছেন। ২০২১ সালের পূর্ববর্তী নির্বাচনের চেয়ে এই সংখ্যা ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। আজ গভীর রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে।

ভোট গ্রহণ শেষে প্রায় অর্ধেক আসনের ফলাফল প্রকাশ করেছে জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক আসাহি শিম্বুন। এতে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন জোট পেয়েছে ১৪৪টি আসন। আর বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত আসনসংখ্যা ১৩৯; অর্থাৎ প্রতিযোগিতা চলছে প্রায় সমানে সমান। তবে বিরোধীদের এই সম্মিলিত আসনসংখ্যার মধ্যে ছয়টি দলের প্রতিনিধিত্ব থাকায় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ এদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এখন পর্যন্ত সিডিপির আসনসংখ্যা ৮৭।

আসাহি শিম্বুনের বুথফেরত জরিপের ফলাফল বলছে, এলডিপি-কোমেই পার্টির ক্ষমতাসীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার মতো পর্যাপ্ত আসন পাবে না। তবে সবকিছু অবশ্য নির্ভর করবে এখন পর্যন্ত ভোট গণনা শেষ না হওয়া আসনের ফলাফলের ওপর।

এদিকে জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে বলছে, বুথফেরত জরিপ ও নিজস্ব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন জোট সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে।

অনেকে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। কয়েকজন জয়ীও হয়েছেন। দল হয়তো এঁদের এখন ফিরিয়ে নেবে। ফলে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সম্ভবত তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। তবে এলডিপির পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা সম্ভব হলেও ইশিবার ভাগ্যের বদল হবে বলে মনে হয় না।