পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিজিবির বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভাঙ্গীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে বাজারে প্রায় ৩ ঘণ্টা তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয়রা। এতে সড়কের দুইধারে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। গন্তব্যে যেতে দূর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীসহ যাত্রীদের।
এরপর বিজিবি সদস্যরা তোপের মুখে পড়লে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাদের মধ্যস্থতায় বিকেলে চেয়ারম্যানকে ছাড়িয়ে নিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। পরে বিজিবি সদস্যরা চলে যায়।
বিজিবি বলছে, মাদকের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযানে পরিচালনা করে তারা। তবে ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, সকালে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে বিজিবির কিছু সদস্য চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে বিজিবি। সেই মুহূর্তে, কথা বলার বাহানায় বাড়ির সদস্যদের মোবাইল ফোন জব্দ করে নেয় তারা। পরে চেয়ারম্যানের ঘরে তল্লাশী করে টেবিলের নিচ থেকে ১০৭ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে চেয়ারম্যানের হাজার হাজার সমর্থক গিয়ে বিজিবির সদস্যদের পথ আটকে দেন। একই সাথে স্থানীয়রা বিজিবি’র রাস্তায় ব্যারিকেট দেয়।
কামরুজ্জামান নামে স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, বিজিবি ফেন্সিডিল দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলো। আমাদের চেয়ারম্যান মাদক তো দূরের কথা ধূমপান-ও করেন না। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।
নাজমুন সাকিবা নিশি নামে স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল বিজিবি। আমরা জানতে পরে সবাই ছুটে আসি। ইউপি চেয়ারম্যানের মানহানিকর এমন কাজের বিচার চাই।
চেয়ারম্যানের পরিবারের অভিযোগ, সকালে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভুতিপুকুর বিওপির কয়েকজন সদস্য চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিনের বাসায় যায়। পরে তারা ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে প্রয়োজন জানিয়ে বাকীদের বাড়ি থেকে বাইরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে ১০ থেকে ১৫ জন বিজিবি সদস্য পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেন।
পরিবারের সদস্যরা বাইরে গেলে ইউপি চেয়ারম্যানকে তার রুমে নিয়ে যায়। পরে তারা ঘর তল্লাশি কথা বলে। এতে চেয়ারম্যান কোন আপত্তি জানান নি। এক পর্যায়ে কৌশলে রাখা ঘরের একটি টেবিলের নিচে বস্তা ভর্তি ১০৭ বোতল ফেনসিডিল পায় বিজিবি সদস্যরা। পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয় ভূতিপুকুর ক্যাম্পে নিয়ে যেতে শুরু করেন তারা।
তুলে নেয়ার সময় গাড়ি থেকে চেয়ারম্যানকে নামিয়ে নেন তারা। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে অতিরিক্ত বিজিবিসহ, ১৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক সহ বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকতা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। এ সময় তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবির কুমার রায়, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহদৎ হোসেন রঞ্জু, সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন উপস্থিত হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পরে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে বিজিবির কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যান।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন জানান, গত কয়েক দিন আগে আমার পরিষদের কয়েকজন সদস্য তিনটি ভারতীয় গরু আটক করে। ভূতিপুকুর সীমান্ত ফাঁরীর বিজিবি সদস্যরা গরু তিনটিকে চাইলে আমরা সেগুলো খোয়ারে দেই। যেহেতু সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা আটক করেছে, তাই গরুগুলোর মালিক বের হয় কিনা জানার জন্য কয়েকদিন খোয়ারে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ নিয়ে বিজিবির এক লোকের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর মাঝে বিজিবির সাথে বিনা কারণে আমার দুরত্ব তৈরী হয়।
চেয়ারম্যান অভিযোগ করে আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমি সব সময় প্রশাসনসহ বিজিবি’কে সহায়তা করার চেষ্টা করি। কিন্তু আজকে আমাকেই বিজিবি ছোট করে দিলো। মাদকের সেই বস্তা তারা কৌশলে আমার ঘরে রেখে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। আমার সুনাম খুন্ন করার চেষ্টায় এমন কর্মকান্ড, বিজিবির বিরুদ্ধে আমি এ ঘটনায় বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর মাঝে এমন একটা ঘটনা ঘটতেই পারে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। একটি ভূল বোঝাবুঝির কারণে এমন উদ্ধুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।