<

সাতটি ট্রাভেল ব্যাগে ১৯৫টি মুঠোফোন চুরি করে পালাচ্ছিল চোরের দল

সংঘবদ্ধ চোর চক্রের দুজন সদস্য আগেই লুঙ্গি পরে সাধারণ ক্রেতা সেজে মুঠোফোনের দোকানটি রেকি করেন। কখন মুঠোফোনের দোকানটি খোলা ও বন্ধ করা হয়, তা দেখেন তাঁরা। নৈশপ্রহরী বিপণিবিতান থেকে কখন চলে যান, সে তথ্য সংগ্রহ করেন চক্রটির ওই দুই সদস্য। এরপর মুঠোফোনের দোকান ও বিপণিবিতানের সব তথ্য চক্রের অন্য সদস্যদের জানান তাঁরা। চক্রের আরেকজন এসব তথ্য ভালোভাবে যাচাই করেন। এরপর মুঠোফোনের দোকানটিতে চুরির পরিকল্পনা করে চক্রটি। মুঠোফোনের দোকানে চুরি করতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। এ সময় বিপণিবিতান ও মুঠোফোনের দোকানের ১২টি তালা কেটে নামীদামি ব্র্যান্ডের প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের ১৯৫টি মুঠোফোন চুরি করে চক্রটি।

তবে শেষ পর্যন্ত চক্রের দুই সদস্য ধরা পড়েছেন। ৭টি ট্রাভেল ব্যাগে ভরে ফোন চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৯৫টি মুঠোফোনসহ চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন জনতা।

জয়পুরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র জিরো পয়েন্টে জাহানারা প্লাজার মুঠোফোনের দোকান মেসার্স মাহবুব ট্রেডার্সে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এই চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চোর চক্রের ২ সদস্যকে আটক ও ৭টি ট্রাভেল ব্যাগে থাকা ১৯৫টি মুঠোফোন জব্দ করেছে থানা-পুলিশ।

আটক ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গাংগো নগর গ্রামের মৃত কুদ্দুস আলীর ছেলে মো. রিপন হোসেন (২৭) এবং কুমিল্লা শহরের টমটম সেতু এলাকার মো. লাকী হোসেনের ছেলে মো. কবির (৩৪)। তাঁদের কাছ থেকে স্ক্রু ড্রাইভার, টর্চলাইট জব্দ করেছে পুলিশ।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে জাহানারা প্লাজা বিপণিবিতানের নৈশপ্রহরী চলে যান। ভোর থেকেই শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড়ে লোকজন ও যানবাহনের সমাগম শুরু হয়। অনেক ছোট-ছোট দোকানপাটও খোলা ছিল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জাহানারা প্লাজার মুঠোফোনের শোরুম মাহাবুব ট্রেডার্সের সামনে পাঁচ-ছয়জন লোক বারবার আসা-যাওয়া করছিলেন। দু–তিনজন ওই বিপণিবিতানের ভেতর থেকে একটি করে ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বের হন। স্থানীয় দোকানিরা তাঁদের মাহাবুব ট্রেডার্স দোকানের কর্মচারী ভেবেছিলেন। হঠাৎই জাহানারা প্লাজা বিপণিবিতানের মালিকের ছেলে বাসা থেকে বের হয়ে তাঁদের বিপণিবিতানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বিপণিবিতানের ভেতর থেকে একজন ব্যক্তিকে ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখে তিনি তাঁকে ধরে ফেলেন। এরপর সেখানে লোকজন জড়ো হন।

ট্রাভেল ব্যাগ খুলে ভেতরে অনেকগুলো মুঠোফোন পাওয়া যায়। মুঠোফোনের দোকানমালিক মাহাবুবকে খবর দেওয়া হয়। তিনি এসে দেখেন, বিপণিবিতানের মূল ফটকের তালা কাটা। তাঁর দোকানঘরের কলাপসিবল ও শাটার গেটের তালাও কাটা। দোকানে ভেতর তাকে তাকে রাখা নামীদামি ব্যান্ডের মুঠোফোনগুলো নেই। তিনি দ্রুত ঘটনাটি থানা-পুলিশ ও বিভিন্ন লোককে জানান। এরপর পাঁচবিবি এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে ট্রাভেল ব্যাগসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেন লোকজন। পরে থানার পুলিশ এসে ট্রাভেল ব্যাগসহ তাঁদের দুজনকে থানায় নিয়ে যায়। বেলা আড়াইটায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহেদ আল মামুন ও উপপরিদর্শক (এসআই) সোলায়মান আলী চুরি যাওয়া দোকান মেসার্স মাহাবুব ট্রেডার্স পরিদর্শন করেন।

দোকানমালিক মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘চোর চক্রটি মার্কেট ও আমার দোকানের ১২টি তালা কেটে ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের মুঠোফোন চুরি করেছে। এসব মুঠোফোন সাতটি ট্রাভেল ব্যাগে ভরে পালানোর সময় লোকজন দুজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন। ৭টি ট্রাভেল ব্যাগে মোট ১৯৫টি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। এসব মুঠোফোনের দাম প্রায় অর্ধকোটি টাকা। সাতসকালে এভাবে চুরির ঘটনায় আমরা হতবাক হয়েছি।’

সদর থানার এসআই সোলায়মান আলী বলেন, চোর চক্রটির দুই সদস্য লুঙ্গি পরে সাধারণ ক্রেতা সেজে আগে মুঠোফোনের দোকানটি রেকি করেছিলেন। সব তথ্য জানার পর চক্রটির সাত-আজনের একটি দল জয়পুরহাটে রাতে অবস্থান করছিলেন। আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চক্রটি তালা কেটে দোকানের ভেতরে ঢুকে ১০ মিনিটের মধ্যে মুঠোফোনগুলো চুরি করেছে।

জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল-মামুন বলেন, ৭টি ট্রাভেল ব্যাগে ১৯৫টি মুঠোফোন পাওয়া গেছে। আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।