<

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে টাকা ধার করার সুযোগ আরও সীমিত হচ্ছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা ধার করার সুযোগ আরও সীমিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগামী মাস থেকে সপ্তাহে এক দিন পুনঃক্রয় চুক্তি বা রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রেপো নিলামের মাধ্যমে টাকা ধার করার সুবিধা রয়েছে।

দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার এ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ৭, ১৪ ও ২৮ দিন মেয়াদি রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। তবে মঙ্গলবার ছুটি থাকলে পরবর্তী কর্মদিবসে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) সুবিধার্থে রিজার্ভ মেইনটেন্যান্স পিরিয়ডের (আরএমপি) দিনে ওভারনাইট বা এক দিনের রেপো নিলামের সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া দৈনিক ভিত্তিতে প্রচলিত নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ও করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিদ্যমান মুদ্রানীতি কাঠামো বা ইন্টারেস্ট রেট করিডরের অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচালিত খোলাবাজার কার্যক্রম বা ওপেন মার্কেট অপারেশনস আরও বেশি কার্যকর করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১ জুলাই এ–সংক্রান্ত এক চিঠিতে সপ্তাহে দুই দিন রেপো নিলাম আয়োজনের কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

রেপো হচ্ছে রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা পুনঃক্রয় চুক্তি; এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নেয়। অর্থের জরুরি চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলো সাধারণত এই সুবিধা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

তফসিলি ব্যাংকের জন্য আগে দৈনিক রেপো নিলামের সুবিধা চালু ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত হিসেবে এই দৈনিক সুবিধা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বুধবার রেপো নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ তখন থেকে প্রতিদিন নিলাম আয়োজনের সুবিধা বন্ধ করা হয়।

আগামী নভেম্বর মাস থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেপোর মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে টাকা ধার করার সুযোগ আরও কমে যাবে।

ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ খাতে তারল্য নিয়ে বর্তমানে যে বড় ধরনের সমস্যা নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত তা প্রতিফলিত করছে। বেসরকারি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, ১০–১২টি ব্যাংকের তারল্যঘাটতি থাকলেও সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে তারল্য আছে, এর ফলে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকনির্ভরতা কমলে সেটা ভালো হবে।

নূরুল আমিন প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়াটাই ভালো। আমার মনে হয়, আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার যদি আরও প্রাণবন্ত হয়, তাহলে সেটা ভালো হবে। ব্যাংকগুলো চাইলে সেখান থেকে ধার করতে পারবে। রেপো সপ্তাহে এক দিন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসা–যাওয়া কম করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যত কম যাওয়া যায়, ততই ভালো।’