বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পেল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ বহাল থাকলো। এখন থেকে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে থাকবে।

রোববার (২০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ রিভিউ নিষ্পত্তি করে এই রায় দেন।

এর আগে, রোববার সকালে দীর্ঘ আট বছর পর আপিল বিভাগে রিভিউটির ওপর শুনানি শুরু হয়। এ সময় পর্যায়ক্রমে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

প্রসঙ্গত, এই রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি হওয়ায় হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও সদ্য ছুটিতে থাকা ১২ বিচারপতির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। এরপর ১৯৭৫ সালে এই ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত করা হয়। তখন কাউন্সিলের মাধ্যমের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো।

এরপর ২০১৪ সালে সংবিধানের যোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আবারও সেই ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরই এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। এরপর ২০১৬ সালে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সেই সংশোধনী বেআইনি ঘোষণা করে রায় দেন। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার আপিল করলেও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সেই আপিল খারিজ করে রায় দেন। এর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

এরপর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে তৎকালীন সরকার। গত আট বছরেও সেই রিভিউ পিটিশনটি শুনানির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রিভিউটি শুনানির উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর রিভিউটি শুনানির জন্য আজ রোববার দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।