যুদ্ধের সমাপ্তি ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় চলতি সপ্তাহে একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি পাঁচ দফা এ পরিকল্পনা দেশে ও বিদেশে মিত্রদের সামনে তুলে ধরবেন। প্রস্তাব সম্পর্কে এখনো প্রকাশ্যে বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে ইউক্রেনের পার্লামেন্টে প্রস্তাবের প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন জেলেনস্কি।
ন্যাটোর সদস্যপদ
জেলেনস্কির প্রস্তাবে সবচেয়ে অগ্রাধিকার থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ইউরোপের ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফায়দা নিয়েছে রাশিয়া। বিশেষ করে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য না হওয়ার বিষয়টি। এটাই তাদের আমাদের ওপর আক্রমণে প্রলুব্ধ করে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একাধিকবার এ কথা বলেছেন, ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ পাওয়া শুধু কিয়েভের নয়, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিরাপত্তাও জোরদার করবে।
প্রতিরক্ষা
ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রস্তাবের মূল একটি দফা হলো ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা। তাঁর প্রস্তাব হলো রাশিয়ার ভূখণ্ডে দেশটির সামরিক স্থাপনায় হামলায় কিয়েভকে যেন তাদের পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো অনুমতি দেয়।
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার অব্যাহত রাখা উচিত কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের। এতে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটাও অব্যাহত রাখা যাবে।
অ-পারমাণবিক প্রতিরোধ
জেলেনস্কির প্রস্তাবের তৃতীয় দফাটি হলো ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা ঠেকানোকে কেন্দ্র করে। এখানে অ-পারমাণবিক প্রতিরোধের বিষয়টি রয়েছে। তবে এ বিষয়ে অবশ্য বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। জেলেনস্কি বলেছেন, প্রস্তাবের এই তৃতীয় দফাটি খুব গোপনীয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির নেতাদের জানানো হয়েছে।
অর্থনৈতিক শক্তি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার চতুর্থ দফাটি হলো ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিয়ে। এর মধ্যে দেশটির লাখো কোটি ডলার মূল্যমানের ধাতব পদার্থ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কিছু গোপনীয়তা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলেনস্কি। বিষয়টি শুধু ইউক্রেনের মিত্রদের জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং যৌথ বিনিয়োগ ও এ খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি বিশেষ চুক্তির জন্য কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা
টেকসই শান্তির জন্য জেলেনস্কির দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাবের শেষ দফাটি হলো যুদ্ধের পর কী হবে, তা নিয়ে। জেলেনস্কির পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধের পর ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাড়াতে ইউরোপে মার্কিন বাহিনীর জায়গায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে মোতায়েন করার বিষয়টিও রয়েছে। একই সঙ্গে জেলেনস্কি বলেছেন, তখন যেন সামরিক সহায়তার জন্য কিয়েভকে বারবার তার মিত্রদের সাহায্য চাইতে না হয়।
ইউক্রেনের পার্লামেন্টে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা চাই, যদি আমাদের মিত্ররা রাজি হয়, ইউরোপে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর কিছু ইউনিটকে ইউক্রেনীয় ইউনিট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে।’