ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় দুটি গণশৌচাগার এক ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোহাম্মদ রাজিব নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন। এই দুটি শৌচাগার এখন তিনিই পরিচালনা করছেন এবং টাকা তুলছেন।
৫ আগস্টের আগে সাজেদা ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা এই দুটি শৌচাগার পরিচালনা করত। দখলের বিষয়ে থানায় বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় অভিযোগ জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে রাজিব শৌচাগার দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রায় এক দশক আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি গণশৌচাগার নির্মাণ করেছে। এগুলো সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। এসব শৌচাগারের পরিচালনা ব্যয় বাদ দিয়ে বাকি অর্থ সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু দখলদারেরা আয়ের অংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা কায়সার রহমান ফারাবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দুই শৌচাগার থেকে আয়ের অর্থ সিটি করপোরেশনের কোষাগারে যাচ্ছে না। যাঁরা দখল করেছেন, তাঁরা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। আমরাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
ওয়াটারএইডের তৈরি এসব শৌচাগারের ভেতর ও বাইরের দেয়াল ও মেঝে ঝকঝকে। শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতায় রয়েছেন পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী নিরাপত্তাকর্মী। সেখানে মাথার ওপরে বৈদ্যুতিক পাখা, নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কক্ষ, টিস্যু, হ্যান্ডওয়াশ, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ নানা সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। জিনিসপত্র রেখে শৌচকাজ সারানোর জন্য রয়েছে লকারের ব্যবস্থা। প্রতিটি শৌচাগারে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।
সরেজমিন দুই শৌচাগারে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট ও পীর ইয়ামেনি মার্কেটসংলগ্ন গণশৌচাগারের নিয়ন্ত্রণ নেন মোহাম্মদ রাজিব। তিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা বললেও আবার নিজেকে চাকরিজীবী হিসেবে পরিচয় দেন।
৮ অক্টোবর শৌচাগার দুটিতে যান এই প্রতিবেদক। প্রথমে পীর ইয়ামেনি মার্কেটের কাছের শৌচাগারে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদ নামের এক তরুণ শৌচাগার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, রাজীব নামের একজন এই শৌচাগার পরিচালনা করছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর কেউ কোনো ‘ঝামেলা’ করছে না।
পাশে জিপিও–সংলগ্ন আরেকটি শৌচাগারে গিয়ে দেখা যায়, মোতালেব নামের এক ব্যক্তি শৌচাগার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছেন। মোতালেবও শৌচাগারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রাজিবের নাম জানান এবং তাঁর মুঠোফোন নম্বর দেন।
মোতালেব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার চইলা যাওয়ার পরপরই এটা রাজীব ভাই নিয়া নিছে। আমরা এখন তাঁর হয়ে দেখভাল করতেছি। এগুলো আগে ভালোভাবে পরিচালনা হইতো না। এখন পরিস্থিতি ভালো হইছে।’
রাজিব নামের ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি এই শৌচাগার দখলের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। তিনি প্রথমে নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বলে দাবি করেন। পরে অবশ্য বলেন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
এভাবে প্রতিষ্ঠান দখল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীব বলেন, ‘আমি ওয়াটারএইডের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেব।’
আগের পরিচালনাকারী সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সালমা আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শৌচাগার দুটি দখলের পর আমরা রাজিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে নারাজ। শৌচাগার থেকে তিনি আমাদের কর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে আর এগোলে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন।’
অভিযোগে কাজ হয়নি
রাজিবের দখল করা শৌচাগার দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। ওয়াটারএইড ও সাজেদা ফাউন্ডেশন প্রথমে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগে দখলের বিষয়ে অভিযোগ জানায়।
ওয়াটারএইডের প্রকল্প সমন্বয়ক কে এ আমিন বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা থানায় বা সেনাক্যাম্পে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী শাহবাগ ও পল্টন থানায় দুটি অভিযোগ করা হয়। কিন্তু আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত (১৫ অক্টোবর) দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কোনো অপকর্ম করার সুযোগ নেই। যাঁরা অপকর্ম করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’